জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষ হিসেবে যেমন ইতিহাসের অংশ, ফলে তিনি যখন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বই রচনা করেন সে সবই হয়ে ওঠে সমাজ-ইতিহাসের অসামান্য ও অনন্য দলিল। বঙ্গবন্ধু- যে মানুষটি রাষ্ট্রের কথা ভাবছেন, সংগ্রাম করছেন, সময়ের প্রতিনিধি, মূল্যবোধের প্রতিনিধি, শ্রেণি মানুষের প্রতিনিধি হয়ে অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় যা ভেবেছেন, দেখেছেন তাই লিখেছেন, ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। যা ঘটেছে তা লিখেছেন। সমকালের সংকট-সম্ভাবনা দুর্বলতা-সফলতা দুটোই তুলে ধরেছেন। ফলে তাঁর রচনাগ্রন্থগুলো আবশ্যিকভাবেই হয়ে ওঠে ইতিহাসের আকর গ্রন্থ। আত্মানুসন্ধানে আগ্রহী নবীন প্রজন্মের যারা বাংলাদেশের ইতিহাস রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে বুঝতে চায় তাদের প্রত্যেকের অবশ্য পড়া উচিত বই তিনটি। তাহলে তারাও ধারণ করতে পারবে বঙ্গবন্ধুকে। যেমনটি নিজেকে জানার আত্মবিশ্লেষণী পাঠ অভিজ্ঞতার শব্দঘর নির্মাণে পূর্ণমাত্রায় সচেষ্ট ছিলেন গবেষক-লেখক, শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আল মোহন। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও চরিত্রের প্রবাহ ধরতে বইয়ের ভেতর ঢুকতে নিরলস ও আন্তরিক ছিলেন। আলোকিত বঙ্গবন্ধুর বিদগ্ধ চেতনার পরিচয় উন্মোচন করা ‘পাঠকের বঙ্গবন্ধু’ বইয়ের চরিত্র ও মূল বিষয় আবিষ্কার করতেও সচেতন ছিলেন। একজন একনিষ্ঠ ও অনুসন্ধিৎসু পাঠক হিসেবে বই তিনটির নিবিড় পাঠের মাধ্যমে জাতির পিতার ভাবনাগুলো ধরতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর ধরতে চেয়েছেন, বুঝতে চেয়েছেন তাঁর বলার ভঙ্গি, খুঁজেছেন মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর মানসপট।
পাবনার যমুনাপাড়ের নগরবাড়ী ঘাটের যমুনা পুত্র আবদুল্লাহ আল মােহনের জন্ম ১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। প্রাতিষ্ঠানিক নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁর। নিত্যসহযােগী, স্বপ্নসহচরী স্ত্রী রাশনা রশীদও| ঢাকার একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার মহান পেশার সাথে জীবনাদর্শে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তার মােহন নেশাটিও শিল্পঘােরে নিরন্তর পরিভ্রমণ, জীবনানন্দে জীবনযাপন। সৃজনীজীবনের সুপ্ত স্বপ্নকে বিকশিত করতে প্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাঙ্গণে। আলােচিত সৃজনশীল সহশিক্ষার আনন্দময় আয়ােজন ‘মঙ্গল আসর পরিচালনা করে আসছেন। অনুকরণীয় শিক্ষকের নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযােগিতায় তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘মােহনের মঙ্গল আসর। লেখাপড়া করেছেন ধােবাখােলা করােনেশন উচ্চ বিদ্যালয় (নাটিয়াবাড়ী, বেড়া, পাবনা), ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। বিপরীতমুখী পেশাজীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায়। সমৃদ্ধ তার জীবন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ। আবু সায়ীদের একান্ত সহকারী হিসেবে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি আবার বিশ্ববরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের জাদুদলের একজন সদস্য হিসেবে। আলােক প্রক্ষেপণেও সহযােগিতা করেছেন মঞ্চে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাজ। করেছেন তকালীন বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ভােরের কাগজে।। এরপর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার প্রশিক্ষণ বিভাগ। এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সােনালী ব্যাংকেও কাজ করেছেন। তার লেখালেখির আগ্রহের অন্যতম বিষয়-আলােকিত ব্যক্তিত্বদের অনুপ্রেরণামূলক জীবনী ও ভ্রমণকাহিনি। জনপ্রিয় সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত সরব কিন্তু। সেখানেও প্রবলভাবে অনুরাগী তিনি জীবনী, ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধে-আলােচনায়, সর্বোপরি মননশীল চিন্তাচর্চায়। গভীরভাবে ভালােবাসেন বইয়ের পাশাপাশি মানুষ নামক জীবন্ত বিশ্বকোষ, মহাগ্রন্থ নিরন্তর পাঠ করতে।। প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ : বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘খােকা থেকে মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা', সম্পর্কের সেতুবন্ধনে : বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’, ‘হাসু থেকে শেখ হাসিনা : দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী’, ‘দৃষ্টি ও অন্তদৃষ্টির ভারত ভ্রমণ’ (দিল্লি, আজমির, জয়পুর ও আগ্রাভ্রমণ কাহিনি), ‘খুঁজে। ফেরা : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘মানবাধিকার চর্চা’, বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তা’ ।