বাঙালি জাতির অতীত গৌরবগাঁথায় সমৃদ্ধ। শিকড় না থাকলে বৃক্ষ যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, তেমনি অতীত ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সঠিক ও সত্যনিষ্ঠ মূল্যায়ন না জানা থাকলে, না করতে পারলে জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয় বলেই প-িতজনেরা মনে করেন। আমাদের বাঙালি জাতিত্তার বিকাশধারার অনুধাবনে বঙ্গবন্ধু, মহান ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে একনিষ্ঠ ও নিবিড় পাঠের কোনো বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে যেমন বাংলা ভাষা ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিধারার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবনের গতিধারা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে সাহসিকতা আর প্রজ্ঞা দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশকে স্বাধীন করাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। ফলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে। শহীদ হওয়ার পূর্বক্ষণটিতেও তিনি বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ ও জাতির কল্যাণের কথা অন্তর দিয়ে ভেবেছেন, অকৃত্রিম আন্তরিকতায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। বাঙালি জাতির প্রাণপুরুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বিরল ভূমিকা আমাদের অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরকাল। নাগরিক হিসেবে আমরা গর্বিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য। গবেষকদের মতে, শেখ মুজিব ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি নিয়ে যখন মাঠে নামেন, তখন থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে এরপর ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে তার সঙ্গে মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বাংলা ভাষা ও বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কের সেতুবন্ধন উপস্থাপনার প্রয়াসে পরিশ্রমী গবেষক, শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মোহন রচিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা’ প্রবন্ধ গ্রন্থটি আগ্রহী পাঠকের মনন চিন্তায় দাগ কাটবে, বঙ্গবন্ধু চর্চ্চাকে এগিয়ে নেবে বলেই গভীরভাবে আশাবাদী।
পাবনার যমুনাপাড়ের নগরবাড়ী ঘাটের যমুনা পুত্র আবদুল্লাহ আল মােহনের জন্ম ১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। প্রাতিষ্ঠানিক নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁর। নিত্যসহযােগী, স্বপ্নসহচরী স্ত্রী রাশনা রশীদও| ঢাকার একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার মহান পেশার সাথে জীবনাদর্শে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তার মােহন নেশাটিও শিল্পঘােরে নিরন্তর পরিভ্রমণ, জীবনানন্দে জীবনযাপন। সৃজনীজীবনের সুপ্ত স্বপ্নকে বিকশিত করতে প্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাঙ্গণে। আলােচিত সৃজনশীল সহশিক্ষার আনন্দময় আয়ােজন ‘মঙ্গল আসর পরিচালনা করে আসছেন। অনুকরণীয় শিক্ষকের নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযােগিতায় তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘মােহনের মঙ্গল আসর। লেখাপড়া করেছেন ধােবাখােলা করােনেশন উচ্চ বিদ্যালয় (নাটিয়াবাড়ী, বেড়া, পাবনা), ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। বিপরীতমুখী পেশাজীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায়। সমৃদ্ধ তার জীবন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ। আবু সায়ীদের একান্ত সহকারী হিসেবে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি আবার বিশ্ববরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের জাদুদলের একজন সদস্য হিসেবে। আলােক প্রক্ষেপণেও সহযােগিতা করেছেন মঞ্চে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাজ। করেছেন তকালীন বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ভােরের কাগজে।। এরপর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার প্রশিক্ষণ বিভাগ। এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সােনালী ব্যাংকেও কাজ করেছেন। তার লেখালেখির আগ্রহের অন্যতম বিষয়-আলােকিত ব্যক্তিত্বদের অনুপ্রেরণামূলক জীবনী ও ভ্রমণকাহিনি। জনপ্রিয় সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত সরব কিন্তু। সেখানেও প্রবলভাবে অনুরাগী তিনি জীবনী, ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধে-আলােচনায়, সর্বোপরি মননশীল চিন্তাচর্চায়। গভীরভাবে ভালােবাসেন বইয়ের পাশাপাশি মানুষ নামক জীবন্ত বিশ্বকোষ, মহাগ্রন্থ নিরন্তর পাঠ করতে।। প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ : বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘খােকা থেকে মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা', সম্পর্কের সেতুবন্ধনে : বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’, ‘হাসু থেকে শেখ হাসিনা : দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী’, ‘দৃষ্টি ও অন্তদৃষ্টির ভারত ভ্রমণ’ (দিল্লি, আজমির, জয়পুর ও আগ্রাভ্রমণ কাহিনি), ‘খুঁজে। ফেরা : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘মানবাধিকার চর্চা’, বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তা’ ।