আমাদের সাংবাদিকতা ও চিন্তার ভ‚গোলের অন্যতম অগ্রনায়ক খোন্দকার আবদুল হামিদের আত্মজা লতিফা চৌধুরী স্বনামেই সুপ্রতিষ্ঠিত। এ কথা কাউকে বলতে হয় না, জাতীয় রাজনীতির প্রধান ধারার শক্তিশালী স্তম্ভ শফি আহমদ চৌধুরী তাঁর জীবনসঙ্গী। সত্যিকার অর্থেই লতিফা চৌধুরী আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের, আমাদের সঙ্গীত গগণের এক আশ্চর্য দীপ্তিময়ী নক্ষত্র। নজরুল সঙ্গীত তাঁর ধ্যান, তাঁর প্রাণের নিভৃততম সৌন্দর্য। একটা জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন এই অবিস্মরণীয় অবগাহনে। আবার মানুষ হিসাবেও তিনি অতুলনীয় বিভায় বিভাময়ী। যারা তাঁর কাছাকাছি গিয়েছেন তারা জানেন, স্নেহ-মমতার দু’কূলপ্লাবী ঢেউয়ে অনির্বচনীয় দোলায় তিনি সর্বদাই পূর্ণতার প্রতিমূর্তি। মানুষের প্রতি মমতা ও দায়িত্বশীলতা তাঁর আত্মাকে দিয়েছে অনবদ্য মাধুর্য। সেজন্যই আজ তিনি সকলের শ্রদ্ধেয়, পরম প্রিয়জন, ছোট-বড় সবার লতিফা আপা। লতিফা আপা সব্যসাচী মানুষ, সঙ্গীত ও সাহিত্য তাঁর সৃজনের দুই আয়ুধ। তাঁর কণ্ঠ সৌকর্যে কয়েক যুগ ধরে যেমন এদেশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে আছে, তেমনি দরদের রেণুমাখা তাঁর কলম। সেই কলম থেকেই উৎসারিত ‘তাঁদের যেমন দেখেছি’। আমাদের সাহিত্যের এক অনন্য ও অশ্রুত দলিল। জাতীয় রাজনীতি, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে যে মহান মানুষগুলো বিচরণশীল ছিলেন বা আছেন, যাঁরা কেউ ইতিহাসের নির্মাতা, কাউকে বা নির্মাণ করেছে স্বয়ং ইতিহাস, তাঁদেরকে খুব কাছ থেকে নিবিড়ভাবে, গভীরভাবে দেখবার ভাববার জানালা ‘তাঁদের যেমন দেখেছি’। দারুণ সব অনাস্বাদিত অবলোকন এ গ্রন্থের পাতায় পাতায়-লতিফা চৌধুরীর সামাজিক অবস্থানই এই আচ্ছাদিত ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্তির সাক্ষী হওয়ার ভিত্তি প্রস্তুর। লতিফা চৌধুরীর বলবার ভঙ্গীটি, তাঁর ভাষার আন্তরিকতা অকপটতা আমাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। এখানে কৃত্রিম, কপট, জটিল, কুজ্ঝটিকার মতো কিছু নেই। পুরোটা জুড়েই আছে সহজ, স্বাভাবিক, অকৃত্রিম, অনায়স ঐশ্বর্য-রুচি ও আভিজাত্যের মিহি জোছনা। আমি লফিতা আপার শানে পেশ করছি আমার কৃতজ্ঞতা। -আবদুল হাই শিকদার
জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৪৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার জামালপুরের এক সুন্দর গ্রামে, নানা বাড়িতে। দাদার বাড়ি শেরপুরে। পিতা মরহুম খোন্দকার আবদুল হামিদ আজীবন সাংবাদিকতা করেছেন। মা মরহুমা জেবুন্নেসা হামিদ। সুযোগের অভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি, কিন্তু নিজের অদম্য ইচ্ছা আর চেষ্টায় তিনি যথেষ্ট আলোকিত একজন ভালো মানুষ ছিলেন। নিজের জীবনের অতৃপ্তিগুলোকে ছেলেমেয়েদের মধ্যে পূর্ণতা দেখতে চেয়েছিলেন। পাঁচ কন্যা ও এক পুত্র-সবাই মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত ও জীবনে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত। বাবা-মায়ের সহযোগিতায় লতিফা চৌধুরী লেখাপড়ার পাশাপাশি গান-বাজনা, খেলাধুলা আর ছোট ছোট সামাজিক কাজে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে ইডেন কলেজ থেকে তিনি বিএ পাশ করেন এবং ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেন।