ইতিহাস মহাকালের আয়না। এখানে প্রতিসরিত হয় তার যাবতীয় রঞ্জন, প্রয়োগ ও গতিবিধি। কোথায় সত্য সুন্দর শুভ্র সমুজ্জ্বল লাবণ্য, কোথায় তিলবর্ণের চিত্ররূপময় শোভা, কোথায় দাগ-নিদাগ ও নিখুঁত-নিটোলের প্রতিচ্ছবি—তার সবই দেখতে পাওয়া যায় ওই মহানিক্তির বিম্বিত আয়নায়। আব্বাসি খিলাফতের অনুষঙ্গে উপর্যুক্ত সারকথাটি ইতিহাসের সমঝদার পাঠক মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। মক্কা-মদিনার পর সিরিয়া থেকে বাগদাদ কীভাবে ইসলামি খিলাফতের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে এবং এশিয়া ইউরোপ ও আফ্রিকায় কীভাবে মুসলিম উম্মাহ অপরাজেয় শক্তিতে পরিণতি লাভ করেন, তা সবিস্তার জানতে ইতিহাসের ওই আয়নার দিকে আমাদের তাকাতেই হবে। ইতিহাসের বাঁকবদল কখনোই একরৈখিক হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসলামের গৌরবদীপ্ত বিচিত্র বিকাশের একটি বিশাল সোনালি সময় মহান আব্বাসি খলিফাদের হাত ধরে অতিক্রান্ত হয়েছে। যারা শত সংশয়ের মাঝেও ছিলেন ঈমানে অবিচল। নিদারুণ নিপীড়নেও ইসলামের রজ্জু ধরে সুসংহত। সমূহ অন্তর্ঘাতমূলক বিভ্রান্তি নিয়েও যারা জিহাদ, শরিয়া, ফিকাহ, হিকমাহ, ফালসাফা, তাসাউফ, তাকওয়া, তালিম-তারবিয়াত, তাহজিব-তামাদ্দুন, কুরবানি ও ইনসাফের সরণিতে সদা ধাবমান। ইসলাম শুধু আরবের নয়, অনারবও এখানে অচ্যুত নয়। স্বাধীন-পরাধীন, সাদা-কালো, ধনী-নির্ধন, কাছের-দূরের সকলের জন্যই সর্বজনীন এবং পক্ষপাতমুক্ত সভ্য ভদ্র সঙ্গত ও মার্জিত চারিত্র্য নিয়ে ইসলাম আবির্ভূত। আব্বাসি আমলে ইসলামের এসব অনন্য আলোকিত দিক সবচেয়ে তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রিয় পাঠক, ইসলামের জ্ঞানময় ধ্যানময় আমল কিংবা তর্কময় এবং বিস্তর আশা-আকাঙ্ক্ষাপূর্ণ মহা সম্ভাবনাময় শাসনকালকে যদি কেউ অধ্যয়ন করতে চান, তাহলে তাকে ‘আব্বাসি খিলাফতের ইতিহাস’ অধ্যয়ন করতে হবে।