সুশ্রী, আধুনিকী নুঝহাতের জীবনসঙ্গী হতে কত পুরুষ ব্যাকুল! অথচ সেখানে আহবাব নামক সাধারণ এক পুরুষের কি তার কাছে অহংকার করা মানায়? বরং অন্যসব পুরুষদের মতোই সেও হবে তাকে পেতে চাইবার জন্য এক ... See more
TK. 275 TK. 237 You Save TK. 38 (14%)
বর্তমানে প্রকাশনীতে এই বইটির মুদ্রিত কপি নেই। বইটি প্রকাশনীতে এভেইলেবল হলে এসএমএস/ইমেইলের মাধ্যমে নোটিফিকেশন পেতে রিকুয়েস্ট ফর রিপ্রিন্ট এ ক্লিক করুন।
সুশ্রী, আধুনিকী নুঝহাতের জীবনসঙ্গী হতে কত পুরুষ ব্যাকুল! অথচ সেখানে আহবাব নামক সাধারণ এক পুরুষের কি তার কাছে অহংকার করা মানায়? বরং অন্যসব পুরুষদের মতোই সেও হবে তাকে পেতে চাইবার জন্য এক উপাসক। এমনটাই ভাবে এবং প্রত্যাশা করে অতি দাম্ভিক চরিত্রের নুঝহাত। কিন্তু যে মেয়েটি সকলের কাছেই সর্বদা ভীষণ আদরের, অমূল্য আর প্রশংসনীয়। সেই মেয়েটিই যখন সাধারণ এক দ্বীনদার পুরুষ আহবাবের কাছে বারবার নিজ কর্মকাণ্ডের কারণে অপমানিত হয়, ম্লান হয়ে যায় পুরুষটির কঠিন ব্যক্তিরূপের কাছে তার ব্যক্তিত্ব, রূপ সৌন্দর্য এবং সকল যোগ্যতা। তখন কি অনায়াসেই সেই অপমান, তুচ্ছতা গ্রহণ করে নিতে পারে নুঝহাত?
ইসরাত জাহান দ্যুতির লেখালেখির সময়টা খু্ব দীর্ঘদিনের না হলেও তবে এই লেখালেখির সঙ্গে স্বল্প দিনেই তার সম্পর্ক অনেকটা গড়ে উঠেছে আত্মিক সম্পর্কের মতো। ২০২০ এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার প্রথম উপন্যাস 'প্রভাতকিরণ' প্রকাশ পায়। এরপর পাঠকদের মনে স্থান পেয়ে যান তিনি এই উপন্যাসের দ্বারাই৷ ফাইন্যান্স বিভাগে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। ব্যক্তিগত জীবনের সুখ সমৃদ্ধির বাইরেও তিনি সুখ আর আনন্দ খুঁজে পান তার লেখা শব্দগুলোর মাঝে। শব্দগুলো থেকে একেকটা বাক্য তৈরি করে কয়েকটি কাল্পনিক চরিত্রের জীবনপ্রবাহের রূপ সৃষ্টিতেই তিনি পরিতৃপ্তি বোধ করেন।
♦ভূমিকাঃ ইদানিং আমার এই স্বভাবটা আবার তৈরি হয়েছে । একদিনের সারাটা মুহূর্ত উপন্যাস নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে । সারাটা দিন একটু পরপর উপন্যাস পড়তে ইচ্ছে করে । এই যে আজকেই কতটা ঘণ্টা উপন্যাস পড়তে পড়তে কাটিয়ে দিলাম । সেদিকে আমার কোনো খেয়ালই নেই । তবুও আবার একটি উপন্যাস পড়তে শুরু করলাম । রাত অতিবাহিত হয়ে যায় আমার উপন্যাস পড়া শেষ হয় না । এই উপন্যাসটি পড়া শুরু করেছিলাম ঠিক রাত ১টা ৩০ মিনিটে । পড়া যখন শেষ হয়েছে তখন সময়টা ৩টা ৪০ মিনিট ।
♦নামকরণঃ জীবনে বয়ে চলা প্রতিটি নীড়ে পাখিরা ঘরে ফিরে । ঘরে ফিরে নিজের জন্য তৈরি করা ঘরে বসে ভবিষ্যতের দিন গোনে । মানুষের জীবনটাও পাখির মতো । একটি পাখি যেমন তার জন্য জীবন ভাসিয়ে দেয়া পাখিটির জন্য সারাদিন ধরে অপেক্ষা করে বসে থাকে মানুষের পিছুটানেও তেমন পাখির মতো সুখটান থাকে । এই পরিবারে থেকেও একলা মানুষ, একলা আনন্দ একা উপলব্ধি নিয়ে বেঁচে থাকে । ফিরে আসতে চায় ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করে থাকা পরিজনের কাছে । পরিবারের মানুষ কাছের মানুষের মতো অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকে তাদের হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে । হয়তো এই হাত ফেরারি পাখির মতো থাকা মানুষগুলো আঁকড়ে ধরবে, হয়তো পাখিটা অপেক্ষমান পাখির পাশে গিয়ে শূন্য থাকা কুলায় শূন্যতার অংশটুকু দূর করবে ।
♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ সুশ্রী, আধুনিকী নুঝহাতের জীবনসঙ্গী হতে কত পুরুষ ব্যাকুল! অথচ সেখানে আহবাব নামক সাধারণ এক পুরুষকে কি তার কাছে অহংকার করা মানায়? বরং অন্যসব পুরুষদের মতোই সেও হবে তাকে পেতে চাইবার জন্য এক উপাসক ।
এমনটাই ভাবে এবং প্রত্যাশা করে অতি দাম্ভিক চরিত্রের নুঝহাত । কিন্তু যে মেয়েটি সকলের কাছেই সর্বদা ভীষণ আদরের, অমূল্য আর প্রশংসানীয় । সেই মেয়েটিই যখন সাধারণ এক দ্বীনদার পুরুষ আহবাবের কাছে বারবার নিজ কর্মকাণ্ডের কারণে অপমানিত হয়, ম্লান হয়ে যায় পুরুষটির কঠিন ব্যক্তিরূপের কাছে তার ব্যক্তিত্ব, রূপ সৌন্দর্য এবং সকল যোগ্যতা । তখন কি অনায়াসেই সেই অপমান, তুচ্ছতা গ্রহণ করে নিতে পারে নুঝহাত?
♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটা বেশ স্নিগ্ধ । এত সুন্দর করে উপন্যাসের জন্য রূপক অর্থে উপন্যাসকে সাজানো বেশ প্রিয় একটা বিষয় । তার পাশাপাশি প্রচ্ছদ জুড়ে রয়েছে সাদা রংয়ের ছাপ । সাদা রংয়ে ঢাকা সাদা মেঘের আকাশটিকে কেনো যেনো পৃথিবীতে থাকা মানুষের জীবনে পরিবারের ফিরে আসার শান্তির সুবাতাস মনে হয় । এত সুন্দর করে পাখির ফিরে আসার আহ্বান দেখানো হয়েছে তা সত্যিই ভালো লাগার মতো ।
♦পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ √উপন্যাসের পটভূমিটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে । এরকম পটভূমি উপন্যাসে অন্যরকম একটা আবহ তৈরি করে আনে । ইসলামিক মনোভাবে উপন্যাসের আদল তৈরি করতে গিয়ে যেভাবে জীবনধারা সাজানো হয় তা বেশ ভালো লাগার মতো হয় । এই উপন্যাসটিতেও যেভাবে ইসলামিক আদব কায়দা, পারিবারিক দৃষ্টিকোণ দেখানো হয়েছে তা অসাধারণ ছিল । নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পর্দার গুরুত্ব উপন্যাসে পটভূমি অনুসারে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে । যাহোক এই উপন্যাসের পটভূমি অসাধারণ হলেও প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ খুবই কম সময়ের জন্য উপন্যাসে স্থিরতা দিয়েছে । আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে, কিছু কিছু ঘটনাপ্রবাহ আরেকটু সময় নিয়ে করা যেতে পারবো । কিছু আবহ একটু স্থায়ী হতে দেয়া যেতো । এই আবেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার জন্য উপন্যাসে আরেকটু সময় দেয়া যেতো । বেশকিছু জলছাপে জীবনধারা আরেকটু সময় নিয়ে সাজালে এই উপন্যাসের শেষদিকে করা তাড়াতাড়ি উপন্যাসের শেষ হওয়া উপন্যাসটি আরেকটু ভালো লাগতে পারতো । এই উপন্যাসের পটভূমি অসাধারণ ছিল । কিন্তু তাকে ঘিরে রাখা জীবনধারা এবং সময়ের ছাপ আরেকটু সময় নিয়ে করা উচিত ছিল ।
√উপন্যাসের চরিত্র গঠন এবং তাদের উপস্থিতি অসাধারণ ছিল । তবে প্রতিটি চরিত্রেরই মনস্তাত্ত্বিক গঠন এবং তাদের আবহ বোঝানোর জন্য আরেকটু সময় দেয়া দরকার ছিল উপন্যাসে । প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ যখন চরিত্রগুলোর জন্য ছাপ ফেলে দিয়ে যেতে চায়, তখন তারা কতটা সেগুলো আবহে মেলে দিয়ে পটভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে তা বোঝানোর জন্য দৃশ্যপট আরেকটু সময় নিয়ে করা যেতে পারতো । আহবাব এর মনের ধার্মিক অনুভূতি কিংবা তারই বিপরীত দিকে নুঝহাতের খানিকটা নিজের মতো দায়বদ্ধতা নিয়ে থাকা জীবন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় ।
♦প্রকাশনীঃ বইবাজার প্রকাশনী এর বই আমার অনেকগুলো পড়া হয়ে গেল । তাদের বই বাঁধাই এবং পৃষ্ঠা বাঁধাই সবসময়ই বেশ ভালো থাকে । তবে টাইপিং মিস্টেক এর দিকে নজর রাখা দরকার । এই উপন্যাসেও টাইপিং মিস্টেক আছে অনেকগুলো । হয়তো পড়তে সমস্যা হয় না, তবুও হঠাৎ করে করে টাইপিং মিস্টেক চলে আসলে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘শূন্য কুলায় ফেরারি পাখি’ লেখক ইসরাত জাহান দ্যুতি’ এর চতুর্থ উপন্যাস । আমার পড়া হিসেবেও তার চতুর্থ উপন্যাস । তার শেষ যে বইটি পড়েছিলাম, সেটি আমার সারাজীবনে পড়া পাঠক হিসেবে যতগুলো উপন্যাস থাকবে তার মধ্যে সবথেকে প্রিয় উপন্যাসগুলোর যদি তালিকা করা হয় তাহলে উপরের দিকে থাকবে । ‘এমনই শ্রাবণ ছিল সেদিন’ উপন্যাসটি আমার এতই প্রিয় । এই উপন্যাসেও লেখকের লেখার ধরন তার আগের লেখা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং অন্যরকম ভাবে এসেছে । যা অবশ্যই একজন লেখকের লেখনীর মুগ্ধতা সৃষ্টি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ । একজন লেখক যত নিজের লেখার ধরন, তার ভাবাবেগ বারবার পটভূমি বাছাই করতে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারবে তত একজন লেখকের জন্য সুন্দর ভাবে একটি উপন্যাস ফুটিয়ে তুলতে সুবিধা হবে । এই উপন্যাসেও এরকম অন্যরকম এক চেষ্টা এবং তা ফুটিয়ে তোলার জন্য যে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা লেখক করেছেন তা অসাধারণ ছিল । আমার বেশ প্রিয় হয়ে গিয়েছে । তবে উপন্যাসে তাড়াতাড়ি শেষের ভাবাবেগটা না আসলেই বেশ ভালো হতে পারতো ।
♦রেটিংঃ ৪.১/৫
♦উপসংহারঃ দেখতে দেখতে সময় কেটে যায় । উপন্যাসের প্রতি মুগ্ধতা চলে আসে ।পাঠক হিসেবে নিজেকে আরো বুঝতে চেষ্টা করার অনুভূতি চলে আসে । বারবার মনে হয় উপন্যাসের জীবনজুড়ে বয়ে চলা একেকটি ক্ষণ যেন পাঠক এই আমি’র মনে গিয়ে আঘাত করে একেকটি সময় । কতশত জীবনের গল্পে মনে ভালোলাগা উত্তরোত্তর হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে ।