‘ইন্টারভিউ একটি ব্যতিক্রমী উপন্যাস। নারীবাদী আন্দোলনের বিভিন্ন দিক আর নারীবাদী তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ আলােচনা উপন্যাসের আঙ্গিকে এই প্রথম। অস্তিত্বের আলােচনা এগিয়েছে। ইন্টারভিউয়ের আঙ্গিকে আর সমান্তরালভাবে উন্মােচিত হয়েছে। জটিল প্লটের আধারে কিছু মানব-মানবীর বিচিত্র সম্পর্ক। লেখক নারী চরিত্রগুলােকে সবল হাতে রূপ দিলেও এবং তারা পুরুষ প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরােধে জয়ী হলেও বাস্তবে যে এটা হয় না,অন্ততঃ এই দেশে,সেই রূঢ় সত্যটিও তিনি তুলে ধরেন উপন্যাসের শেষে সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুটি সংবাদতথ্য উদ্ধৃত করে । যে দেশে এখনাে চারটি কন্যা সন্তান জন্ম দেবার জন্য অপরাধের গ্লানি আর সামাজিক লাঞ্ছনা সহ্য। করতে না পেরে সন্তান সন্ততিসহ গরীব মাকে আত্মাহুতি দিতে হয় আর বিয়ে করতে রাজী না হয়ে কলেজ ছাত্রীকে এসিডদগ্ধ হতে হয় সেদেশে যে নারীবাদের পােষ্ট-মর্ডানিষ্ট ব্যাখ্যা খুবই একাডেমীক আর এলিটিস্ট এই সত্যটি তুলে ধরা হয় ক্ষোভ আর লজ্জায় । এইভাবে ফেমিনিজমের বিশ্ব প্রেক্ষাপটে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন অবস্থানের নারী,যা থেকে প্রমাণিত হয় যে নারী একটি বিশেষ শ্রেণী নয়, তাদের মধ্যেও রয়েছে কেবল বৈশ্বিক নয় একই দেশে সামাজিক অবস্থানের তারতম্য। নারীবাদী সাহিত্যে ‘ইন্টারভিড় একটি নতুন সংযােজন আলােড়ন সৃষ্টিকারী এক জোরালাে বক্তব্যও বটে।পরীক্ষানীরিক্ষায় সদা আগ্রহী আর নি। রন্তর চেষ্টায় নিবেদিত এই লেখক ইন্টারভিউ উপন্যাস নিয়ে তার সমসাময়ীকতুকে প্রতিষ্ঠিত করলেন সন্দেহাতীতভাবে।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।