আলেকজান্ডারের গুপ্তধন গল্প এগিয়েছে অমরদার এক অনন্য সাধারণ অ্যাডভেঞ্চার ডিটেকটিভ জার্নিকে কেন্দ্র করে। হ্যাঁ, অমরদা, গোয়েন্দাপ্রবর অমর রায়, এ গল্পের নায়ক। বাংলা সাহিত্যের আইকনিক গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু, কর্নেল প্রমুখের মাঝে গোয়েন্দাপ্রবর অমর রায় জায়গা করে নিতে পারবে কিনা সেটা তো একমাত্র ভবিষ্যৎ-ই বলতে পারে তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বর্তমানের ক্ষয়প্রাপ্ত বাংলা গোয়েন্দা সমাজকে ভীষণরকমভাবে নাড়া দেওয়ার সমস্ত রসদ মজুত আছে এই গোয়েন্দাপ্রবর অমর রায়-এর মধ্যে। প্রথমে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিক্ষিপ্ত চারটে ঘটনা দিয়ে শুরু হয় এই রহস্য উপন্যাস। ঘটনা চারটে হল “রহস্যময় মৃত্যু”, “মিউজিয়ামে চুরি”, “আলেকজান্ডার দি গ্রেট” ও “ভূতুড়ে বাড়ি”। ঘটনা চারটে এতটাই বিপরীতধর্মী যে মনে সন্দেহ জাগে, কোন যোগসূত্র কি থাকা সম্ভব এই ঘটনা চারটের মধ্যে? কিন্তু উপন্যাসের সমাপ্তির পথে লেখক যে ভাবে ঘটনা চারটের সম্পৃক্তিকরণ ঘটান তা দেখে এটা বিশ্বাস করা একেবারেই অসম্ভব যে এটা লেখকের প্রথম বই। উপন্যাসে খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই আসে আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান ও আলেকজান্ডারের মৃত্যু পর্ব। শুধু এই একটা পর্বই জানিয়ে দেয় কত পরিশ্রম ও গবেষণার ফল অনিমেষবাবুর এই রহস্য উপন্যাস। কতদূর গড়াল রহস্যের জল? এমন রহস্য, যার নাতো শুরু জানা আছে, না আছে শেষের হদিস। সূত্র শুধু একটাই – গৌরচন্দ্র নাগের রহস্যময় ডায়েরি। রহস্য যেন শেষ হয়েও শেষ হতে চায় না। কালীপ্রসন্নবাবু আবিষ্কার করলেন প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লেখা কিছু সাংকেতিক চিহ্ন। গল্প যত এগোতে থাকে, ঘটনার ঘনঘটায় তত বাড়তে থাকে রহস্যের পরিধি। লেখকের তুখোড় বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা, সাবলীল লেখনী আর ঘটনায় মোচড় সৃষ্টি করার দুর্লভ ক্ষমতার প্রয়োগে অচিরেই পাঠক মনে বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। সারাক্ষণ টানটান উত্তেজনা, রোমহর্ষক অনুভূতি আর কি হবে, কি হবে সাসপেন্সের চৌম্বক শক্তিতে আটকে থাকতে বাধ্য পাঠক মন। অনিমেষবাবুর কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ পুরো দমে হাওয়া লাগিয়ে ছেড়ে দিন গোয়েন্দাপ্রবর অমর রায়কে। আপনার নিজের স্বার্থে না হলেও রহস্যপ্রেমী বাঙালী পাঠকদের স্বার্থে অমর রায়ের বারবার রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়াটা অত্যন্ত দরকার।