ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে সারা দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন ও পরিবহন ব্যবস্থা। সেই সাথে শিল্প কল-কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এর অবশ্যম্ভব পরিণতি হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এতে খাদ্যপণ্য সহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের দেশগুলোও বাদ পড়ছে না। এমন কী এককালের মহাপরাক্রমশালী সা¤্রাজ্যের অধিকারী গ্রেট ব্রিটেনের মানুষ তিন বেলা খাবার পাচ্ছে না। সুপারশপগুলোতে খাবার নেই। মাংসের দাম দেড়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ২৫ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক এক বেলা না খেয়ে থাকছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেবি ফুডের জন্য হাহাকার। এ বিষয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো রকম রাখ ঢাক ছাড়াই স্বীকার করেছেন, আমরা এখন ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হচ্ছি। আমাদের ঘাড়ে ৩৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ আছে। এই সমস্যার সমাধান না করে বাইডেন প্রশাসন ভেনিজুয়েলা, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশের কাছে সাহায্য চাইছেন ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। ইউরোপের অবস্থা আরো খারাপ। জ্বালানি সঙ্কটে বিভিন্ন দেশ রান্নার জ্বালানির জন্য গাছ কাটার অনুমতি দিচ্ছে। বলছে গ্যাসের ব্যবহার, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে অনেক শিল্প কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। অনেকদিন পর বাংলাদেশে আবারও লোড শেডিং শুরু হয়েছে। কারণ জ্বালানি সঙ্কটে অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, অতি প্রয়োজনীয় পণ্য সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সাথে সরকার এসির ব্যবহার হ্রাস করতে বলেছে। বেড়ে গেছে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম। শুধু ইউরোপ-আমেরিকা বা বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় ইউক্রেন যুদ্ধে সারা দুনিয়ায় টালমাটাল অবস্থা। কিন্তু কেন এই অবস্থা? এই জন্য দায়ী কে বা কারা, তার অনুসন্ধান করা হয়েছে আমার ‘ইউক্রেন যুদ্ধ: আমেরিকা ও মুসলিম বিশ্ব’ শিরোনামের বইতে। এই বইতে আমি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণ অনুসন্ধান ও যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে এ বিষয়ে কতটা সফল হয়েছি তা বিবেচনা বা মূল্যায়নের দায়িত্ব পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে এ বিষয়ে পাঠককে এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আর যাই হোক হতাশ হবেন না। বরং এ ক্ষেত্রে আপনার মনোজগতে অনেক নতুন নতুন চিন্তা ও প্রশ্নের উদয় হবে। সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে আপনি নিজেই ইউক্রেন যুদ্ধের রহস্যভেদ করতে সক্ষম হবেন।
জন্ম ১৯৪৪, নেত্রকোনায়। শৈশব কেটেছে বাবার চাকরিসূত্রে সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের নানা জেলা শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৬-তে স্নাতকোত্তর। কিছুদিন অধ্যাপনার পর ১৯৬৮ সালে কূটনৈতিক ক্যাডারে যোগ দেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন কলকাতা, ভারতে মিশন-প্রধান ছিলেন। এরপর মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। প্রকাশিত অন্যান্য বই : শায়েস্তা খানের শেষ ইচ্ছা ও অন্যান্য (২০১২), গুপ্তধনের খোঁজে (২০১৩), হারাধনের দশটি ছেলে ও অন্যান্য (২০১৫) ও দেখা না-দেখায় মেশা (২০১৫)। ইতিহাসের অপ্রচলিত অলিগলিতে তাঁর বরাবরই প্রবল আগ্রহ। কলের গানের পুরোনো বাংলা রেকর্ড সংগ্রহ, গ্রন্থপাঠ ও অবসরে অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন।