মওলানা জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বিশেষ কোন পরিচয় করিয়ে দেয়া আমাদের কাজ নয়। বরং তাঁর ভাষায় পৃথিবীতে যে দু’টি মাত্র শ্রেণী- জালিম আর মজলুম; সেই বিবেচনায় মজলুমের পক্ষে আজীবন সংগ্রামী একজন নেতা হিসেবে আমরা তাঁকে তুলে আনতে চাই। তাঁর দীর্ঘ জীবন ও বহুবিধ কর্মকাণ্ড আমরা আপনার সকাশে তুলে ধরতে চাই। বইটিতে বিষয়ভিত্তিক নানা দিক নানা মুনির ভাষায়; সময়ে একই বিষয় ভিন্ন জনের ভিন্ন ভাষায় সম্পাদন করা হয়েছে। চলমান আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মওলানা ভাসানীকে জানবার, বুঝবার ও গবেষণা করবার যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা বইটির কলেবর সাজিয়েছি। যারা এই বহুমাত্রিক মানুষটিকে জানতে, বুঝতে এবং তাঁকে নিয়ে গবেষণা করতে চান; বইটি তাদের চাহিদা মেটাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা আশাকরি। সেই সাথে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক ধারা এবং কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি যে ভাষা সৃষ্টি করে গেছেন, সেই ভাষা আগামী দিনে মজলুম মানুষের জন্য নতুন এক সাম্যের পৃথিবী গড়তে সক্ষম হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বাকিটা আমরা আপনার কাছে জানতে চাই। বইটি পাঠ করে আপনিও আপনার মন্তব্য/পাঠপ্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়। মওলানা ভাসানী গবেষণা প্রকল্পে আপনিও যুক্ত থাকুন; গবেষণায় ও পৃষ্ঠপোষকতায়। এখন থেকে ভাসানী পরিষদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ভাসানী-গবেষণা প্রকল্প’ মওলানা ভাসানীর জীবন ও কর্ম নির্ভর বিষয়ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং প্রতি বছর সেগুলো পুস্তক আকারে প্রকাশ করে যাবে। এই বইয়ের বিক্রয়লব্ধ অর্থের লভ্যাংশ উক্ত গবেষণা প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।
স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একাত্তরে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে পরপর দুটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। চিঠি দুটির বিষয়বস্তু একই। বলা যায় পরের চিঠিটা আগেরটির তাগিদপত্র মাত্র। বেশকিছু বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়ের সাথে যে বিষয়টি নিয়ে প্রধানত নানা মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত, চর্চিত- তাহলো 'বাংলাদেশ—ভারত কনফেডারেশন' গঠন প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়েই মহল বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম প্রবক্তা মওলানা ভাসানী সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। এখন অবধি কোন গবেষক কিংবা ইতিহাসবিদ এর মূল রহস্য উদঘাটনে তৎপর হতে দেখা যায়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে মওলানা ভাসানী কেন আলোচ্য চিঠি দুটি লিখেছিলেন তা নিয়ে রীতিমত ভাবিত হওয়ার বিষয়ই বটে। জাতীয় স্বার্থেই এর গভীরে প্রবেশ অত্যন্ত জরুরি। 'বাংলাদেশ—ভারত কনফেডারেশন : একাত্তরে ইন্দিরাকে ভাসানীর চিঠি' বইটিতে আমরা তারই প্রতিফলন দেখতে পাবো। বইটির রচয়িতা সুসাহিত্যিক ও গবেষক আরেফিন বাদল মওলানা ভাসানীকে কাছ থেকে দেখেছেন ও দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে বুঝবার চেষ্টা করেছেন। ১৯৭৬ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার পক্ষ থেকে অসুস্থ্য মওলানা ভাসানীর সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে তাঁর কাছে 'কনফেডারেশন' প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া একমাত্র জীবিত ব্যক্তি হিসেবে এটি তার দায়বদ্ধতা ও ঐতিহাসিক দায়িত্বও বটে। তারই ফসল এই বই। এই গ্রন্থে বিভিন্ন তথ্য—উপাত্তের সহায়তায় এর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে গ্রন্থ—লেখকের নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেয়ার কোন প্রয়াস নেই। সংযোজিত তথ্য—উপাত্তের সংশ্লিষ্ট সূত্রও এগুলোর সাথেই সংযোজন করে দেয়া হয়েছে। কেনো এবং কোন্ পরিস্থিতির বাতাবরণে আলোচ্য চিঠি দুটির অবতারণা- তার প্রেক্ষাপট, মওলানা ভাসানীর উদ্দেশ্য, আন্তরিক তাগিদ কিংবা রাজনৈতিক কৌশল বা অন্য কোন অনুসঙ্গ; সেটির অন্বেষণের প্রয়াসই এই গ্রন্থ। আমাদের বিশ্বাস, গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠক নিজেই একটা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হবেন। এবং তা যদি হয়, সেটিই হবে আমাদের শ্রমের স্বার্থকতা। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে অনেক গবেষণাকর্মী এই বিষয়ে আরো তথ্যনির্ভর বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাকর্ম উপহার দিয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন। ভাসানী গবেষণা প্রকল্পের তৃতীয় বই এটি।