রাহুকেতুর ভুলভুলাইয়ায় রাহুকেতু উপন্যাসের কালখণ্ডটি হাংরি আন্দোলনে আমার বিরুদ্ধে মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছিল সেই বিচিত্র আহ্লাদ-আনন্দ ঈর্ষা, যৌনতা আর প্রেমের সময়কে ধরার প্রয়াস। অর্থাৎ ঘটনা ও চরিত্রেরা কল্পিত নয় । তাদের নাম আমি পালটে দিয়েছি । পাটনা শহর এই উপন্যাসে কানপুর, কেননা দুটি শহরই গঙ্গার তীরে । উপন্যাসে আমি রাহুল সিংহ বা রাহু। দাদা সমীর রায়চৌধুরী উপন্যাসে অনিকেত সিংহ বা কেতু । হাংরি আন্দোলনের কালখণ্ডে সাহিত্য ও বিদ্যায়তনিক জগত আমাদের সেই ভাবেই দেগে দিতে চেয়েছিল । ভুলভুলাইয়ায় ঢোকার সূত্রগুলো ধরিয়ে দিই । এই উপন্যাসে ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতার শুভা আছে, তার নাম দিয়েছি অঞ্জলি । আছেন বয়ঃসন্ধির প্রেমিকা কুলসুম আপা ( তহমিনা আপা) যিনি আমাকে প্রথম কবিতা ও যৌনতার পাঠ শিখিয়েছিলেন । আছেন নেপালী সহপাঠিনী ভূবনমোহিনী রাণা ( রাণো ), মমতা অবস্হী ( মীরা ব্যানার্জি ) যাঁর সঙ্গে পালাইনি বলে আত্মহত্যা করেছিলেন। ব্রাহ্ম যুবতী সুমিতা চক্রবর্তী ( নমিতা চক্রবর্তী ) যিনি আমাকে ব্রাহ্ম কবি ও লেখকদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন এবং মার্কসবাদে আকৃষ্ট করেন । নমিতা চক্রবর্তী আমার ‘ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস, ‘প্রাকার পরিখা’ আর ‘ঔরস’ উপন্যাসে আছেন মানসী বর্মণ হয়ে । আমার ঠাকুমা অপূর্বময়ী আছেন যিনি রাহুকেতু উপন্যাসে সবাকসুন্দরী । আছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ( অসীম গাঙ্গুলি ), সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ( প্রদীপন চাটুজ্জে ), শক্তি চট্টোপাধ্যায় ( রক্তিম চাটুজ্জে ), দেবী রায় ওরফে হারাধন ধাড়া ( হরিচরণ খাঁড়া ), কৃষ্ণগোপাল মল্লিক ( সিংহবাহিনী ), সুভাষ ঘোষ ( প্রভাস চোঙদার ), শুভঙ্কর দাশ ( তীর্থংকর গুহরায় ), শৈলেশ্বর ঘোষ ( কামেশ্বর চোঙদার ), তারাপদ রায় ( হরিপদ রায় ), সুবিমল বসাক ( সুকোমল রুদ্র ), অনিল করঞ্জাই ( অনীক খাস্তগীর ), করুণানিধান মুখোপাধ্যায় ( নির্মল বাউলা ), হিপিনি মার্গারেট ( এমেলিয়া বোনিয়া ) যিনি আমার ‘অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা’ উপন্যাসে প্রকৃত যৌনতা ও নেশার ঘটনাবলী নিয়ে উপস্হিত । প্রদীপ চৌধুরী ( অমলেন্দু আতর্থী ) আছেন । হিন্দি লেখক রাজকমল চৌধুরী ( নীলকমল চৌধুরী )। দীপক মজুমদার ( রূপক মজুমদার ), আনন্দ বাগচী ( অর্নব বাগচী ) । রাহুকেতু পড়ার সময়ে কে কোন চরিত্র মনে না রাখলেও চলবে । যাঁরা ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমি খুঁজতে চান তাঁরা হয়তো জানতে চাইবেন কে কোন জন । যেহেতু হাংরি আন্দোলন নিয়ে পিএইচডি এবং এম ফিল করা হচ্ছে, ভারতে আর বিদেশে, তাই আমি সূত্রগুলো ধরিয়ে দিলুম । তাছাড়া তখনকার তপ্ত ও শীতল আবহাওয়ার খবরও পাবেন পাঠক । সাগর ইসলামকে অজস্র ধন্যবাদ বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে ‘রাহুকেতু’ পৌঁছে দেবার জন্য। মলয় রায়চৌধুরী মুম্বাই
কলকাতার আদি পরিবার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের সন্তান হলেও মলয় রায়চৌধুরীর (১৯৩৯) শৈশব কেটেছে পাটনা শহরের অন্ত্যজ-হিন্দু ও অতিদরিদ্র মুসলমান পাড়া ইমলিতলায়। তাঁর ঠাকুরদা লক্ষ্মীনারায়ণ, পরিবারের আশ্রয় ত্যাগ করে লাহোরে গিয়ে ফোটোগ্রাফি শেখেন ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায় আরম্ভ করেন। পাটনায় তাঁর হৃদরোগে মৃত্যুর পর মলয়ের বাবা রঞ্জিত কুড়িজনের পারিবারিক দায়িত্ব নিয়ে ছবি আঁকা ও ফোটোগ্রাফির দোকান স্থাপন করেন। মলয়ের বড়ো জ্যাঠামশায় পাটনা মিউজিয়ামে ‘কিপার অব পেইনটিংস ও স্কাল্পচারের' চাকুরি পেলে, মলয় গ্রীষ্মের ও অন্যান্য স্কুল-ছুটিতে মিউজিয়ামের বিভিন্ন ঘরে একা একা ঘুরে বেড়াতেন এবং শৈশবের সেই অভিজ্ঞতা তাঁর মননে মানব-সংস্কৃতির একটি গাঢ় আস্তরণ মেলে দিয়েছে। তাঁর দাদামশায় কিশোরীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কারকারী বিজ্ঞানী রোনাল্ড রসের সহযোগী এবং অবদানের জন্য সপ্তম এডওয়ার্ডের স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তা সত্ত্বেও, মলয়ের দাদার আগে তাঁদের পরিবারের কেউ স্কুল-কলেজের শিক্ষা পাননি, যদিও তাঁর ঠাকুরদা ফারসি ও আরবি ভাষা এবং দাদামশায় ইংরেজি পড়তে-লিখতে জানতেন। জেঠা ও বাবা-মা স্ব-শিক্ষিত ছিলেন । মলয় প্রাইমারি স্তরে ইংরেজি মাধ্যম ক্যাথলিক স্কুলে ও পরে বাংলা মাধ্যম ব্রাহ্ম স্কুলে পড়াশোনা করেন। ক্যাথলিক স্কুলের বাইবেল ক্লাসে তিনি পরিচিত হন ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্টের কাহিনিগুলোর সঙ্গে । ব্রাহ্ম স্কুলের গ্রন্থাগারিক নমিতা চক্রবর্তী তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের কবিতার পরিচয় করান। ইমলিতলা পাড়ায় মুসলমান তরুণী কুলসুম আপা তাঁর সঙ্গে পরিচয় করান গালিব ও ফয়েজের কবিতার। মলয়ের সাহিত্য জীবনে এই দুই তরুণীর গভীর প্রভাব রয়ে গেছে।