এই রচনার প্রথম মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে-সকল যুবক উম্মাহর নেতৃত্ব দিতে চায়, মিল্লাতের অতীত উত্তরাধিকার সম্পর্কে তাদের অবহিতকরণ। ইসলাম এ পর্যন্ত বিশ্বসভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানে যা দিয়েছে, এখানে তা নিয়ে ঈষৎ আলোকপাত ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি পাঠকের অন্তরে তাদের সোনালি উত্তরাধিকার নিয়ে এক অপার্থিব গর্ব জন্ম দেবে। জাগৃতির নতুন প্রেরণার সঞ্চার ঘটাবে। তবে এ প্রেরণা নির্জীব পাথুরে প্রকৃতির, কিংবা প্রশান্তি নিয়ে বসে থাকার মতো হলে হবে না। কারণ, কোনো জাতিই অতীতে বাস করে না; বাস করে বর্তমানে। অতএব, বর্তমানকে বর্ণ ও কর্মময় করে গড়ে তুলতে হলে সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের নতুন দিগন্তে ডানা মেলতে হবে। এ কারণেই রচনাটির দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বপ্নচারীদের জানানো—ইসলাম অতীতে যা করে দেখিয়েছে, আবারও তা করে দেখানোর যোগ্যতা রাখে। ইসলামের প্রতিটি পদচারণায় অতীতের শানশওকত প্রতিফলিত হতে পারে। আজ মুসলিমদের সিংহভাগ সদস্য সাহসহারা, ভীতু। কারণ, তারা দেখতে পাচ্ছে বিশ্বে তাদের স্বজাতির অবস্থা খুবই বিপন্ন। সময়ের প্রেক্ষাপটে জীবনমান একেবারে তলানিতে। তাদের সামনে উন্নতির সুযোগ নিতান্তই সীমিত। প্রযুক্তিতে পশ্চিমাবিশ্বের মোকাবিলায় অনেক পেছনে, যোজন যোজন দূরে। হতাশাজনক এসব দৃশ্য তাদের সরাসরি ওই প্রান্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে যে, ইসলাম পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গ দিতে অক্ষম–সে তার আঁচলে আধুনিকতা ধারণের যোগ্যতা রাখে না। এ জন্যই ইসলামি রাষ্ট্রগুলো এতটা পিছিয়ে। তারা তো অজ্ঞতাবশত এ কথা বলতেও দ্বিধা করে না—ইসলাম হচ্ছে পশ্চাৎপদতা, উন্নতি ও বিজ্ঞানের শত্রু। অথচ কথাগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবতাবিবর্জিত। এই গ্রন্থে প্রদত্ত উদ্ধৃতিগুলো পাঠের মাধ্যমে বিষয়টি আরও ভালোভাবেই উপলব্ধ হবে বলে বিশ্বাস।
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। নুর আহমাদ চেয়ারম্যান নামে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। ব্রিটিশ আমল থেকে প্রায় ৪০ বছরের সুদীর্ঘ সময় একাধারে রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্টারিয়ান, আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, বক্তা, প্রথিতযশা লেখক, সমাজসেবক প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত একজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। বল্লভভাই প্যাটেল, স্যার তাজ বাহাদুর সপ্রু, মুহাম্মাদ আলি জিন্নাহ, আসামের আবদুল মতিন চৌধুরী, ড. বি. আর. অম্বেদকর প্রমুখের মতো নুর আহমাদ তৎকালীন ভারতের শ্রেষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম বারে যোগ দেন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ৩৩ বছর বয়সে চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত একটানা ৩৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৭-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ১০ বছর ছিলেন বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার (বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল) সদস্য। উপমহাদেশে তিনিই প্রথম চট্টগ্রামে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাইমারি শিক্ষা চালু করেন। ১৯৪৭-১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সাত বছর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় চট্টগ্রামের পৌরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতি শুরু হয় খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে তাঁর সমাজকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘খান সাহেব’ উপাধি দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অবশ্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে ‘সিতারায়ে খেদমত’ উপাধি ও মাসিক ৫০০ টাকা সাহিত্যবৃত্তি দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রস্তাবকারী এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রথম নোটিশ প্রদানকারী। তিনি সুখপাঠ্য বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেছেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর এই মহান কর্মবীর ইনতিকাল করেন