ভূমিকা আশির দশকের শেষে দিকে সামাজিক সংস্কার কর্মকাণ্ডের বাঁধুনি আলগা হয়ে এলে জার্মানীতে গণমানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। গণ বেকারত্ব ও শ্রমের বেড়ে চলা শোষনের ফলে নারীর উপর বেড়ে ওঠে শোষণ ও নিপীড়ন। অন্যদিকে সামাজিক উৎপাদন খাতে এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার ফলে নারী নতুন আত্নবিশ্বাস অর্জন করতে থাকে। ফলে নারী-স্বাধিকার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে সচেতনতাও বেড়ে ওঠে। নারীর এ সংগ্রাম ক্রমে গড়ে ওঠা শ্রমজীবীর শ্রেণীর সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
গোটা দশকে এ অঞ্চলে মার্কসিস্ট লেনিনস্ট এবং শ্রমজীবি আন্দোলনের বর্জন ও ভুলগুলোর মূল্য অনেক। বিশেষত: নারী স্বধিকার সংগ্রামের ক্ষেত্রে মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট তত্ত্বের কাজে পদ্ধতিগত আরও উন্নয়নে এবং শ্রমজীবির শ্রেণীর সংগ্রামের সাথে নারী মুক্তির অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্রকে অবহেলা করা হয়েছে। মার্ক এঙ্গেলস এবং লেনিন এর যে তত্ত্বগত ভিত রচনা করা গেছেন তা একপাশে ঠেলে সরিয়ে রাখা হয়।এভাবে ঐ মৌলিক তাত্ত্বিক ভিতের সংস্কারবাদী এভং পরিবর্তনবাদী মিথ্যায়নে সুযোগ তৈরি হয়। এ ফলে জার্মানীর সমাজ উন্নয়নে এবং নারী আন্দোলন বাস্তব সমানাধিকার অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে বুর্জোয়া নারীবাদের প্রভাব ব্যাপক বিস্তৃত হয় । ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের ব্যর্থতার পর পরই পাতিবুর্জোয়া নারীবাদ একসময় নারী আন্দোলনেক ছড়িয়ে যায়। এক সময় তা জঙ্গি ও সংগ্রামী চেহারা ধারণ করে। তা নারী পুরুষের ভেতরকার সামাজিক অসামান্য সম্পর্কের সচেতনতা সৃষ্টিতে ,কিছু সামাজিক সংস্কার পাওয়ার পথে সফলও হয়। এমনকি নারীদের মধ্যে আত্নবিশ্বাস তৈরি ও বেশ কিছু সামাজিক কুসংস্কারও ভেঙে ফেলে।
পশ্চিম জার্মানীতে নারীর প্রাতিষ্ঠানিক আ্ইনী সমানাধিকার অর্জিত হয় সত্তরের দশকে। ততদিনে তাদের বাস্তব সামাজিক অসুবিধাগুলো স্পষ্ট হয়ে এসেছে। কিন্তু খুব কম লোকই সচেতন ছিলো যে তাদের অবস্থা পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং বুর্জোয়া সমাজের জীবন যাপন প্রক্রিয়ার শর্তে বাঁধা। এ পরিস্থিতিতে সমাজের বুর্জোয়া ও পাতিবুর্জোয়া জীবন ধারার সমালোচনা নি:সন্দেহে নারীর মুক্তির লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে চালিত যে কোনও সংগ্রামের একটি বাস্তব ভিত্তি তৈরি করে। তবে এসব সমালোচনাকে অবশ্যই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের শোষণ ও নিপীড়নের গোটা প্রক্রিয়ার প্রতিটি দিকে উন্মেোচিত করতে হবে।
এ গ্রন্থের বা প্রকাশনার ভুলগুলোর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। পাঠক সমালোচক যদি এ অতি জরুরি গ্রন্থটি গ্রহণ করেন, তাতেই আমার শ্রম সার্থক হবে মনে করি। জাহানারা নুরী লালমাটিয়া,ঢাকা ২৯পৌষ ১৪১৬, ১২ জানুয়ারি ২০১০