তথ্য—প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে লিখিত যোগাযোগের দ্রুততম ও আধুনিকতম মাধ্যম হলো ই—মেইল বা বৈদ্যুতিন চিঠি। ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য আদানপ্রদান ও যোগাযোগের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হলো ই—মেইল। আবার মোবাইল টেলিকম প্রযুক্তি ব্যবহার করে বার্তা পাঠানোকে শর্ট মেসেজ সার্ভিস বা খুদে বার্তা বলে থাকি আমরা। ইন্টারনেট ছাড়া কেবল মোবাইল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে খুদে বার্তা প্রেরণ করা যায়। তবে একবিংশ শতাব্দীর আগে আমাদের দেশে ই—মেইল কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খুদে বার্তা প্রেরণ বর্তমানের মতো এতটা সহজলভ্য ছিল না। একটি স্থান থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে বসবাসরত আত্মীয়—স্বজন, বন্ধু—বান্ধব, পরিচিতজনের খোঁজখবর নেওয়ার মাধ্যম ছিল চিঠিপত্র। এই চিঠি বা পত্র একস্থান থেকে অন্যস্থানে ডাকযোগে প্রেরণ করা হতো। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে চিঠির ব্যবহার কমে গেলেও ডাকব্যবস্থাকে আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে। যখন মোবাইল আমাদের হাতে আসেনি, কিংবা আসলেও সর্বসাধারণের হাতে পৌঁছায়নি তখন এই চিঠিপত্রের মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করতাম। নিকটস্থ ডাকঘর— পোস্ট অফিসে যেয়ে যেখানে পাঠাতাম তার পূর্ণ ঠিকানা পোস্ট কোডসহ পাঠাতে হতো। ডাকযোগে পাঠানো ছাড়াও লোক মারফতে আমরা চিঠি প্রেরণ করতাম। এই গ্রন্থটিতে আমি বত্রিশটি চিঠি সন্নিবেশ করেছি যা বিভিন্ন সময়ে আমার এবং আমার পরিবারের লোকজন, নিকটাত্মীয়, বন্ধুদের মধ্যে আদান—প্রদান হয়েছিল। গ্রন্থটিতে এমন সময়ের চিঠিও রয়েছে যখন আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। এই চিঠি আত্মীয়—স্বজনদের সাথে আমার সম্পর্ককে দৃঢ় করেছে এবং মানসিক অস্থিরতাকে দূরীভূত করেছে। পঞ্চম শ্রেণি পাশের পর আম্মুর ইচ্ছা অনুযায়ী মহাগ্রন্থ আল কুরআনের হাফেজ (মুখস্থকারী) হওয়ার নিমিত্তে আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। ২৪ পারা মুখস্থ শেষ হওয়ার সময় আম্মু ইন্তেকাল করেন। মাদ্রাসায় পড়ার কারণে বাড়ির বাইরে, বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হতো বেশিরভাগ সময়ে। তখন খোঁজ—খবর নেওয়ার উৎকৃষ্ট মাধ্যম ছিল চিঠি। বিশেষ করে আমার নানুবাড়ি কিশোরগঞ্ছ হওয়ায় নানুবাড়ির স্বজনরা চিঠির মাধ্যমে খোঁজ—খবর নিতেন। ২০০৩—২০০৪ এর দিকে আব্বুসহ অন্যান্য স্বজনরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শুরু করেন। মোবাইল কলরেট বেশি হওয়ায় শুধু জরুরি কথা অল্প সময়ে সেরে ফেলতে হতো। ২০০৩—২০০৪ এর আগে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে দোকানে গিয়ে কথা বলতে হতো। মোবাইলে প্রতি মিনিট কল রেট মোবাইল টেলিকম ব্যবসায়ীরা ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত রাখতেন। আমার মনে আছে, ২০০২ সালে আমাদের বাড়ি থেকে কিশোরগঞ্ছ (নানুবাড়ি) কথা বলতাম মোবাইল ফোনের দোকানে গিয়ে। ২০০২ সালে আম্মুর মৃত্যুর খবরও আমাদের এলাকার সুমি টেলিফোন সেন্টার নামে এক দোকান থেকে কিশোরগঞ্ছে নানুবাসার অদূরে এক মোবাইল ফোনের দোকানের ব্যবসায়ীর নিকট জানানো হয়েছিল। তিনি নানুবাসার লোকজনকে আম্মুর মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেন। ঐ সময়ে অভিমুখী (ইনকামিং) কলের জন্যও অনেক দোকানদার টাকা নিতেন। আমার এই গ্রন্থটিতে ২০০১—২০০৩ সালের চিঠিগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। ২০০৩ এর পর আর কোনো চিঠি আদান—প্রদান করা হয়নি। এর মধ্যে অবশ্য চারটি চিঠি আছে এরও আগের। এই চিঠিগুলো আমি নিজের কাছে এতদিন সযত্নে রেখে দিয়েছিলাম। পুরনো কোনো জিনিস সংরক্ষণ আমার অন্যতম অভ্যাস। এই চিঠিগুলোর মূল্য আমার কাছে অনেক। চিঠিগুলো যাতে হারিয়ে কিংবা নষ্ট না হয়ে যায় তাই চিঠিগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চিঠিগুলো আমি নিজেই কম্পোজ করেছি আমার রিয়েলমি জিটি মাস্টার এন্ড্রয়েড ফোন সেটে। কম্পোজ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছি, কেঁদেছি। কাছের মানুষের কত আগের লেখা! কত উপদেশ দিয়ে চিঠি লিখতেন তারা আমাকে। আরিফ কম্পিউটার আইটি সেন্টারের ছোট ভাই সাব্বির হোসেন কম্পোজকৃত লেখাগুলো সাজিয়ে দিয়েছে সুন্দর করে এবং চিঠিগুলোকে স্ক্যানিং করে লেখার সাথে সংযুক্ত করেছে। স্ক্যানিংয়ে সাব্বিরকে সহায়তা করেছে আরেক ছোট ভাই ইমতিয়াজ। ওদের প্রতি ভালোবাসা। পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তারা আমার ভালো কাজকে সবসময়ই উৎসাহ প্রদান করেন। আমার বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। উনার কাছ থেকে আমি সবসময়ই একটা মৌন সমর্থন পেয়ে থাকি গ্রন্থ প্রকাশের ব্যাপারে। কৃতজ্ঞতা জানাই সহধর্মিণী সৈয়দা শারমিন নিশাতের প্রতি। গ্রন্থটি প্রকাশের সময় ও অসুস্থ ছিল। গ্রন্থটি প্রকাশে অনেক সময় ব্যয়ের কারণে ওকে ঠিকমতো সময় দিতে পারিনি। এ নিয়ে ও কোনো অনুযোগ করেনি। আমার নিকটাত্মীয়, বন্ধু, শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি যারা আমার লেখালেখিকে নিরন্তর উৎসাহ যুগিয়ে থাকেন।
কবি পরিচিতি: ইব্রাহিম নোমানের জন্ম শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। বাবা মশিউর রহমান এবং মা রেশমা আঞ্জুমান। স্থানীয় ফুলকুঁড়ি কিন্ডারগার্টেনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। পঞ্চম শ্রেণিতে মেধাবৃত্তিসহ উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন । পরে তিনি পবিত্র কুরআনের হাফেজ হন। স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। সাহিত্য এবং ইতিহাসের প্রতি তার টান প্রবল। বই পড়তে ও লেখালেখি করতে ভালোবাসেন তিনি। বৈচিত্রময় চরিত্রের অধিকারী কবি পছন্দ করেন গতানুগতিক জীবন যাপন এড়িয়ে চলার। মাকে হারিয়েছেন ২০০২ সালের ১২ই এপ্রিল। এটাই তার জীবনের বৃহৎ ট্র্যাজেডি হিসেবে তিনি মনে করেন। বাবার অনমনীয় দৃঢ়তা আর সমর্থনে তিনি জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। মহান সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাস তার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তিনি পরম সত্য বলে বিবেচনা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তিনি ২০১৬ সালে মাস্টার্সে পড়াকালীন পঠিত একটি কোর্সের জন্য একটি বই সম্পাদনা করেন। সম্পাদিত বইটি (সমকালীন মুসলিম চিন্তাবিদ) বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সহায়ক পাঠ্যবই হিসেবে বিবেচিত। তার প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ হচ্ছে বিচিন্ত্য রচনাবলি (প্রবন্ধ গ্রন্থ), জলের অক্ষর ( কিশোর কাব্যগ্রন্থ), তুমি আমি একজন (সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ)।