চাঁদশী-বরিশাল-বাংলা তথা ভারতবর্ষে, যাঁর নামের পাশে অনেক ক্ষেত্রে প্রথমার আসন আজো সুরক্ষিত, তিনি এক মহিয়সী বঙ্গরমণী, নাম ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। তাঁর নামের বিভা আজো ছড়িয়ে আছে স্বমহিমায়, ইতিহাসের খেরোখাতায় তিনি আজো অগ্রগণ্য। কাদম্বিনী বসু। বিয়ের পর কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। তাঁর জন্ম ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যু ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে। জীবনকাল ৬২ বছর। না ফেরার দেশে চলে যাবার পরও চলে গিয়েছে আরো ২০২২-১৯২৩ = ৯৯ বছর। শতাব্দীর সীমানা পেরিয়ে এক ক্ষণজন্মা নারী আজো আলোর দ্যুতি ফেলে, জ্ঞান ও সাধনার প্রদীপ জ্বালিয়ে আমাদের আপ্লুত করেন, মোহিত করে যান। অনেক তথ্য হারিয়ে গেছে, সময়ের ব্যবধানে অনেক গল্পকথা ডালপালা ছড়িয়েছে। তথাপি অন্তহীন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার পাপড়ি যাঁকে ঘিরে আছে, তাঁকে নিয়ে বর্ণে-শব্দে-বাক্যে ধরে রাখার প্রয়াস কাক্সিক্ষত হলেও কষ্টসাধ্য। রাতের বিপরীতে সাঁতরিয়ে যিনি অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন, শত বছরের ধুলো সরিয়ে তাঁকে কাছে দেখার প্রচেষ্টার মাঝেও এক ধরনের আনন্দ অনুভব করা যায়। হোক না তা অপূর্ণ তবু বৃষ্টিভেজা সবুজ ঘাসের বুকে পথ চলতে চলতে এক মুগ্ধতা টেনে নিয়ে যায় বহমান নদীতীরে। নদীবক্ষে পাল তুলে ছুটে চলেছেন কালজয়ী এক নারী যাঁকে সবাই চেনেন প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক ডা. কাদম্বিনী নামে। যে সকল বই থেকে, তরঙ্গবিহার করে, মিনি পর্দায় তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার ছবি দেখে যা কিছু সঞ্চয় ও উপস্থাপনা, এই বইয়ের ছত্রে ছত্রে, সেজন্য সকল লেখক-গবেষক-কুশীলবদের জানাই অযুত অভিবাদন ও বিনম্র শ্রদ্ধা। শুধু কৃতজ্ঞতা স্বীকার বাহুল্য হবে। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই কাদম্বিনী বসুর পৈত্রিক ভিটা বরিশালের গৌরনদীর চাঁদশী গ্রামের কয়েকজন সুধীকে। তাঁরা হলেন চাঁদশী গ্রামের শ্রী তপন কুমার বসু মজুমদার, অশোক কুমার বসু মজুমদার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শ্রী কৃষ্ণকান্ত দে (চিত্ত), চাঁদশীর ঈশ্বর চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি অঞ্জনা রাণী মণ্ডল, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব শ্রী প্রশান্ত কুমার দাস, গৌরনদী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে এক সময়ে আমার সহকর্মী জনাব বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস। বহু আক্ষেপ থেকেই কাগজ ও কলমের মিলন হলো। ডা. কাদম্বিনী বরিশালের মেয়ে হলেও, এই বাংলার গর্ব হলেও বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে অদ্যাবধি কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। সেই শূন্যতার সরোবরে একটুখানি না হয় নৌকা ভাসালাম। তথাপি সকল ভুল-ভ্রান্তির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। কেউ যদি ভুল ধরিয়ে দেন বা নতুন তথ্যে সমৃদ্ধ করেন, তাঁদের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা, এই পর্যায়ে শুধু অগ্রিম শুভেচ্ছা। ডা. কাদম্বিনী (বসু) গাঙ্গুলীর সংগ্রামী জীবনের কথা ও কাহিনি কথা বলুক; আজ ও আগামীকাল।