কমরেড প্রসূনকান্তি রায়। বরুণ রায় নামেই সমধিক পরিচিত। মাত্র বিশ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। সে বছরই স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করার অভিযোগে প্রথম গ্রেফতার হন। ব্রিটিশ আমলে একবার, পাকিস্তানে চারবার ও স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮০ ও ১৯৮৭ সালে দুইবার গ্রেফতার হন। জীবনে প্রায় চোদ্দো বছর কারাভোগ করেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদসদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা-আন্দোলনের প্রথম পর্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর ভাসান পানির আন্দোলন, ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯০ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় না-থাকলেও শোষিত অধিকারবঞ্চিত মানুষের পক্ষে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলি গ্রামের সম্ভ্রান্ত জমিদারপরিবারের এই সংগ্রামী; পিতামহের কর্মস্থল বিহাররাজ্যের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন ১০ নভেম্বর ১৯২২ সালে। পিতামহ রায় বাহাদুর কৈলাসচন্দ্র রায় ওড়িষ্যা-বিহার প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্টেটারি ছিলেন। পিতা করুণাসিন্ধু রায়, বৃহত্তর সিলেট জেলার কৃষক আন্দোলনের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ এবং আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি সিলেট প্রজাস্বত্ব আইন আসাম প্রাদেশিক পরিষদে উত্থাপন করেন এবং এর সমর্থনে সিলেট থেকে শিলং পর্যন্ত কৃষকদের বিশাল পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। মাতা সুভাষিণী রায়। বরুণ রায় ৮ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।