পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, প্রাচীন বিভিন্ন নগরীর আলোচনা করেছেন। এমন সব জনপদের আলোচনা করেছেন, যাদের মতো শক্তিশালী জনপথ পৃথিবী আর দেখেনি। এমন জনপদের আলোচনাও করেছেন, যাদের শাসকরা ছিল জুলুমবাজে সেরা। ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে যারা উদাহরণ রেখেছিল, তাদের আলোচনাও কুরআনের বিভিন্ন সূরায় এসেছে।
কুরআনের এসব জাতি, গোষ্ঠী, শহর, এলাকার ভৌগলিক ইতিহাস নিয়ে সাইয়েদ সুলাইমান নদবি (রহ.) লিখেছেন 'আল কুরআনের ভৌগোলিক ইতিহাস'। কুরআন যেহেতু আরবে নাযিল হয়েছে, তাই লেখক আলোচনা শুরু করেছেন আরব নিয়ে। এরপর বাহরাইন, ওমান, নাজদ, ইয়ামান, শাম (সিরিয়া), ইরান, গ্রিস সহ বিভিন্ন স্থানের আলোচনা। এসবের মাঝে মাঝে লেখক বিভিন্ন জাতি, যেমন, আদ জাতী,সামুদ, মাদয়ান, সাবা, তুব্বা, আসহাবুল উখদুদ, আরবের নানান জাতির ভৌগলিক ইতিহাস আলোচনা করেছেন।
কুরআনকে ভূগোলের চোখে দেখার জন্য এই বইটি অত্যন্ত চমৎকার। প্রকাশের পর থেকেই বইটি নিয়ে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরি., আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানি, ওস্তাদ শামস তাবরিজ খান, সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদবি (রহ.) সহ বিশ্ববরেণ্য অনেক আলিম উলামা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
ভারত-উপমহাদেশে সিরাতচর্চা, ইতিহাস ও আরবিভাষার সাহিত্য নিয়ে যারা গবেষণামূলক কাজ করেছেন, কর্মগুণে হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য—সাইয়েদ সুলাইমান নদবি রহ. তাদের সবচেয়ে অগ্রসারির। ১৮৮৪ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিহারের দিসনাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশ্ববিখ্যাত নদওয়াতে পড়াশোনা করে সেখানেই দীর্ঘ দিন আরবিভাষার পাঠদান করেন এই প্রাজ্ঞ প্রতিভাধর; পাশাপাশি ছিলেন আন-নদওয়া আরবি পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ও সম্পাদনার পাশাপাশি লিখেছেন অসংখ্য কালজয়ী গ্রন্থ, প্রদান করেছেন পৃথিবীখ্যাত সিরাত-বিষয়ক ভাষণ—খুতুবাতে মাদরাজ নামে যা বিশ্ববিখ্যাত। সিরাতুন নবি (যুগ্ম), সিরাতে আয়েশা, আরদুল কুরআন, খৈয়ামসহ যা-ই তিনি লিখেছেন, সেটিকেই করে তুলেছেন পাঠ-অনিবার্য। এসব আকরগ্রন্থ তাকে এনে দিয়েছে অমরত্বের মর্যাদা। তার লেখা ইতিহাসের পাণ্ডুলিপিগুলো শাস্ত্রীয় সংজ্ঞা পার হয়ে হৃদয়কেও স্পর্শ করে প্রবলভাবে।