বিতর্ক যুক্তি আর বোধের মুক্তচচা। যুক্তি, তত্ত্ব আর তথ্যের সংমিশ্রণ জ্ঞান লাভের এক অনন্য বাকশিল্প। বিতর্কচর্চা প্রখর বুদ্ধিমত্তায় শাণিত মেধা ও মননের উদ্দীপক। অন্তরের শুদ্ধতায় মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে। আলোকিত দেশ গড়ার নান্দনিক প্রয়াস। এটি একজন মানুষকে সৃজনশীল, যুক্তিবাদী, প্রজ্ঞাবান ও দায়িত্বশীল করার মাধ্যম। একজন বিতার্কিক যদি জনপ্রতিনিধি হন যুক্তিচর্চার মান হবে আরো উন্নত এবং গণতন্ত্রের মান হবে আরো সুউচ্চ। মানুষ নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, চায় নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবতার অনুশীলন এবং এই চাওয়াই একজন মানুষকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে । প্রাচীনকাল থেকে গ্রিস ও ভারতবর্ষে সত্যকে অনুসন্ধান এবং সত্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার একটি প্রপঞ্চহীন মাধ্যম হিসেবে বিতর্ক প্রচলিত ছিল। তথ্য-প্রযুক্তির চোখধাঁধানো উন্নয়নের এ যুগে নিজের সত্তাকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিভাতকরণ, মেধা-মননের সৃজনশীল বিকাশ, যৌক্তিকবোধ, জাগ্রত বিবেক, অকৃত্রিম দেশপ্রেমকে ধারণ করার জন্য বিতর্কচর্চার বিকল্প অপ্রতুল। অধুনাকালে এটি শিল্পসংস্কৃতির অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের মতো এটি এখনো তাত্ত্বিক ও প্রকাশনাগত ভিত্তি লাভ করতে পারেনি। এই অপূর্ণতা ঘোচানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে বর্তমান গ্রন্থটি প্রকাশে আমরা সচেষ্ট হয়েছি। পরিশীলিত বাচনিক ক্ষমতা, শুদ্ধ উচ্চারণ এবং আত্মবিশ্বাসপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি একজন বাকশিল্পী তথা বক্তার প্রধান প্রণিধান। আর অনন্য বাকশিল্পীই একজন পরিপূর্ণ বিতার্কিকে পরিণত হতে পারে। আবার অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিতার্কিকই নেতৃত্বের অমিত গুণাবলির মাধ্যমে বিতর্কের সুযোগ্য সংগঠকে পরিণত হয়। তাইতো আমরা এই গ্রন্থে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সকল পাঠকের কথা মাথায় রেখে সহজ সাবলীল ভাষায় বিতর্ক, উচ্চারণ, বক্তব্য, নেতৃত্ব এবং বিতর্ক সংগঠন পরিচালনার মৌলিক বিষয়গুলোকে সুনিপুণ গাঁথুনির মাধ্যমে বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছি। আমাদের এই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে গ্রন্থটির প্রথম প্রকাশ হিসেবে ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে আমাদের চলার পথকে সুগম করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।