দিনের সমস্ত কর্মব্যস্ততার পর্দা টেনে সন্ধ্যা নামছে। আকাশের শেষ সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ডুবতে ব্যস্ত। গাঁয়ের বধূরা রাঙা বিকেলের শেষ রশ্মিতে পায়ে হেঁটে নদীর ঘাটে জল ভরছে। মাঝি ভাইয়েরা নৌকার পাল নামাতে ব্যস্ত।
মানুষ ঘরে আর পাখিরা নীড়ে ফিরছে। বিকেল থেকে কয়েকটা মাঝবয়সি ছেলে নদীর পাড়ে খেলা করছিলো হই-হুল্লোড় করে, আপনমনে তারা ঘরে ফিরছে। রাখাল ছেলে গরুর পাল নিয়ে ফিরছে আপন ঠিকানায়। সন্ধ্যে যেন ধূসর চাদর বিছিয়ে দিচ্ছে ধরণির বুকে। কি এক গভীর নীরবতায় সন্ধ্যা নেমে আসে।
সৃষ্টিকর্তার অপরুপ লীলাখেলা! ঠিক তখনি দূর মসজিদ থেকে সুমধুর কণ্ঠে ভেসে আসলো মাগরিবের আজানের ধ্বনি- "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।"
সাথে সাথে গ্রামের ঘরে ঘরে জ্বলে উঠলো হারিকেন আর কেরোসিনের প্রদীপের আলো।
বৈশাখ মাস। ঝড় তুফান হওয়ার কথা। কিন্তু না, এখন পর্যন্ত একটু বৃষ্টির ফোঁটাও পড়েনি। প্রতিদিন মানুষ কত অপেক্ষা করে একটু বৃষ্টির জন্য, রোদে মানুষের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এই গরমে একটু বৃষ্টি হলে প্রাণ বাঁচে মানুষের। কিন্তু বৃষ্টির নামগন্ধ নেই।
সারাদিনের পরিশ্রম শেষে কামাল আহমেদ ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরলেন। স্ত্রী পাপিয়াকে ডাক দিয়ে বললেন, "একটু লেবুর শরবত করে দাও তো পাপিয়া।"
পাপিয়া বললেন, "এখানে ধন্যবাদের কী আছে? আমাদের জন্যই তো তুমি এতো পরিশ্রম করো, তোমার জন্য যা করবো তাই কম হবে।"
কামাল আহমেদ বললেন, "ভুল বললে পাপিয়া, তোমরা মেয়েরাই পুরুষদের জন্য বেশি করো। আমরা অনেকেই তার ঠিকঠাক মূল্য দিতে পারি না।
এই ধরো তুমি আমার বংশ প্রদীপের জন্য কতো কষ্ট করতেছো, এটা তো তুমি বা নারী জাতি ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। ছোট থেকে পরম যত্নে মেয়েদের মা-বাবা মেয়েদের বড় করে তুলেন, আর বিয়ের পর সেই মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সবার খেদমত করে, দেখাশোনা করে, এতোকিছু করেও দিনশেষে অনেক মেয়েরা তার শ্বশুরবাড়িতে অবহেলিত থাকে।
আসলে আমাদেরই দুর্ভাগ্য, আমরা পুরুষরা তোমাদের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারি না।" স্বামীর মুখ থেকে এসব কথা শুনে পাপিয়া মুচকি হেসে বললেন , "তোমার মতো স্বামী পেয়ে সত্যি আমি ধন্য।"
যদি সব পুরুষের মনোভাব এমন হতো তবে পৃথিবীটাই বদলে যেত।