ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। আমাদের পরম প্রাপ্তি। মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, বেদনা, শৌর্য ও আত্মত্যাগের পূর্ণ ইতিহাসকে আমরা যত বেশি জানব ততই জাতি হিসেবে একতাবদ্ধ হতে পারব। একাত্তরের সশস্ত্র সংগ্রাম কেবল নয় মাসের একটি সামরিক অভিযান ছিল না, এই সমস্ত সংগ্রাম ছিল বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত গণসংগ্রামের শীর্ষবিন্দু। জনগণের ধারাবাহিক সংগ্রামী অভিযাত্রার শক্তিকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠে সশস্ত্র সংগ্রামের রাজনৈতিক, সামাজিক, আদর্শিক ভিত্তি আর এই চেতনাকে লালন ও ধারণ করে সমগ্র সংগ্রামের পর হানাদার বাহিনীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশপ্রেমিক তরুণ ও সাধারণ মানুষ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ এক অতি পরিচিত নাম, খোদ ঢাকা নগরীতে গেরিলা অ্যাকশনের লক্ষ্যে ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ সৃষ্টি করার পুরো কৃতিত্ব হচ্ছে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ এবং তার বিশ্বস্ত সহকারী ছিলেন মেজর এটিএম হায়দার। দুর্ধর্ষ ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ এর অন্যতম একজন শহিদ বদিউল আলম (বীর বিক্রম), তবে স্বাধীনতার এতটা বছর পরেও তাঁর সম্পর্কে যতটুকু জানা হয়েছে তা বিস্তৃত নয়। ২০১৯ সালে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয় শহিদ বদিউল আলমের মা শহিদ জননী রওশন আরা খানমের এক অসাধারণ গ্রন্থ ‘শহীদ বদি ও আমার স্মৃতিতে একাত্তর’। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত ২য় রুবিনা হোসেনের গ্রন্থনা ও লুৎফর হোসেন এবং রুবিনা হোসেনের সম্পাদনায় ঢাকার রচয়িতা প্রকাশন থেকে ‘দীপ্রতপন’ নামে স্মারক গ্রন্থ। ২০১৯ সালে প্রগতি প্রকাশন থেকে ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ অদম্য গেরিলা, এ নামে আরও একটি গ্রন্থ সাংবাদিক আজাদুর রহমান চন্দনের প্রকাশিত হয়েছে। এই তিনটি গ্রন্থের নিবিড় পাঠক হিসেবে যতই নিজেকে যুক্ত করেছি ততই মনে হয়েছে এক অমূল্য রত্নকে আবিষ্কার করছি। এই তিনটি গ্রন্থকে সামনে রেখে সহজ সরল ভাষায় গল্পের মতো কিশোর উপযোগী ‘ক্র্যাক প্লাটুনের রবিন হুড’ নামে গ্রন্থটি প্রকাশের অন্যতম লক্ষ্য, একজন অকুতোভয় বীর যোদ্ধাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রাখা। অশেষ ঋণ এই তিন গ্রন্থের লেখকদের কাছে। অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী আনিসুল ইসলাম সুজনের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। উনি আমার একটি গ্রন্থ প্রকাশের আগ্রহ করে, যা আমার কাছে বিশেষ প্রেরণা। আশা করছি এ গ্রন্থটি তরুণ প্রজন্মকে কিছুটা হলেও ইতিহাসের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। আনোয়ারা আলম চট্টগ্রাম।