যে কোনো ক্ষতি ইসলামে নিষিদ্ধ হলেও আমাদের সমাজের মানুষের অন্যায্য, অনৈতিক ব্যবহারে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অন্য মানুষ। এসব অনৈতিক কাজের পরিণতি কি হতে পারে তা হয়তো আমাদের অজানা। গল্পের মাধ্যমে একটু ধারণা নেওয়া যাক, একজন লোকের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে সব কিছুতেই তার অনেক উন্নতি। নাম তার জাফর সাহেব।তার একজন ফুটফুটে ছেলে সন্তানও রয়েছে। এসব দেখে তার প্রতিবেশী রহমত আলীর ভালো লাগতো না। রহমত আলী সব সময় চাইত জাফর সাহেবের ক্ষতি। সবসময় জাফর সাহেবের জন্য বদ দোয়া করত যেন তার ছেলেটা মারা যায় এবং বদ বুদ্ধি দিত যেন তার সকল উন্নতি থেমে যায়। হঠাৎ একদিন রহমত আলী অফিস থেকে ফিরে এসে দেখল, বাড়িতে কান্নার রোল। পুরো বাড়িতে মানুষের ভিড়। ভেতরে প্রবেশ করতেই তিনি জানতে পারলেন তার তিন মেয়ে একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রহমত আলী জ্ঞান হারালো। সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, হাদিসে হযরত রাসূল (সাঃ) বলেন, ' ক্ষতি করাও যাবে না ক্ষতি সহ্য করাও যাবে না। যে অন্যের ক্ষতি করল, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন, এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।' ( সুনানে দারাকুতনি- ৩০৭৯) আলোচ্য হাদীসে হযরত রাসূল (সাঃ) সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বুঝা যায় ক্ষতি প্রতিহত করা ইসলামের মূল নীতি। সে নিজেকে যেমন ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে, তেমনি অন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে। হাদিসের ব্যাখ্যাকার মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন, ' একথা স্পষ্ট যে শারীরিক, আর্থিক, পার্থিব ও পরকালীন সব ধরনের ক্ষতি এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।' ( মিরকাতুল মাফাতিহঃ ৮/৩১৫৬) অন্যের কথা শুনে শুনে আমরা যে কিভাবে নিজেদের ক্ষতি সাধন করছি চলুন একটা গল্পের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক, এক ব্যক্তি ঘোড়া চড়ে সফরে বের হল। সঙ্গে তার স্ত্রী এবং ছেলে হেঁটে যাচ্ছিল। একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বলল, ' দেখো কত বড় নিষ্ঠুর লোক স্ত্রী সন্তানকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে আর নিজেই ঘোড়ার সওয়ার হয়ে যাচ্ছে।' লোকটি ভাবল, লোকেরা ঠিকই তো বলছে। এভাবেই নিচে নেমে আসলো এবং ছেলেকে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিজে হেঁটে যেতে লাগলো। রাস্তায় ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে দেখে গ্রামের লোকেরা বলল, ' দেখো দেখো! ছেলেটা কত বড় বেয়াদব নিজে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে আর বৃদ্ধ বাবাকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে। ' লোকটি ভাবল, এটা ঠিক বলছে। সুতরাং এবার স্ত্রীকে ঘোড়ায় বসিয়ে নিজেরা হেঁটে যেতে লাগলো। অতঃপর একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বলতে লাগলো, ' একে বলে বউয়ের মুরিদ মনে হচ্ছে স্ত্রীর কাছে একেবারে দাস - খত লিখে দিয়েছে।' লোকে ভাবলো এরাও ঠিক বলছে, এ কথা চিন্তা করে স্ত্রী সন্তান সবাইকে নিয়ে আবার ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলো। অতঃপর এক গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা দেখে বলল, ' আরে ঘোড়াটাকে কেন তিলে তিলে মারছো? একটা গুলি করে দিলেই তো হয়ে যায় একটা ঘোড়ায় একসাথে কতজন মানুষ সওয়ার হয়েছে?' লোকটি দেখলো সবাই ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি সবাই নেমে পড়ল এবং ঘোড়ার লাগাম ধরে হেঁটে চলল। পথে লোকেরা তাদেরকে দেখে বলতে লাগলো, ' দেখো না শোকের বান্দা একে বলে আল্লাহর নেয়ামতের কোন কদর নেই। ঘরে নিজের যানবাহন রয়েছে অথচ সবাই হেঁটে যাচ্ছে! আরে পালাক্রমে এক একজন করে চড়লে তো পারে, সবার সওয়ার যদি ইচ্ছাই না থাকতো তবে সঙ্গে নিয়ে আসার কি প্রয়োজন ছিল! ঘরে বেঁধে রেখে আসলেই তো ভালো হতো। ' লোকটি দেখলো ঘোড়ায় চড়ার কোন পদ্ধতি আর বাদ রাখা হয়নি। সুতরাং ঘোড়ায় না চড়ে অন্য কোন পদ্ধতি আছে কি-না তাই করতে হবে।