কথায় বলে ‘গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল’ কথাটি এদেশের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। বাংলাদেশে সম্ভবতঃ লাখে একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে নিজেকে ‘বানরের বংশধর’ বলে মনে করে। অথচ এরূপ একটি ফালতু বিষয়কে বিজ্ঞানের নামে স্কুল-কলেজে এমনকি ২০১৪ সাল থেকে মাদ্রাসার সিলেবাসেও ঢুকানো হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরাও এরূপ আক্বীদা পোষণ করেননা বলে জানি। তাহ’লে কারা এগুলি করছে এবং কাদের গোপন নির্দেশে সরকার জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে জনগণকে নাস্তিক বানাবার এই আত্মঘাতী প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে, আমরা ভেবে পাই না। আমাদের হাতে আল্লাহ যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছেন, ততটুকু দিয়ে এই তাওহীদ বিরোধী পশুত্ববাদী আক্বীদার প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। বর্তমান লেখনী তারই একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। এর দ্বারা আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সতর্ক ও সজাগ করতে চাই। যেন তারা নাস্তিক হয়ে জাহান্নামী না হয়। মূলতঃ মাওলানা আব্দুর রহীম (১৯১৮-১৯৮৭ খৃ.)-এর ‘বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টি তত্ত¡’ (মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৯২) বইটিকে সামনে রেখেই লেখনীর অবতারণা। আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি তাঁর বইয়ের ২য় সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছেন, বইটি আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপকদের নিকট পাঠিয়েছি, অনেকে চেয়েও নিয়েছেন আমার কাছ থেকে, কিন্তু তাদের কারুরই কোন মন্তব্য আমার নিকট পৌঁছায়নি। তাই আমি ৬ দিগদর্শন বিবর্তনবাদ-১ ৬ আজ আবার বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করছি, ডারউইনের বিবর্তনবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ধোঁকা, প্রতারণা ও বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী’। মাওলানার সঙ্গে আমরাও একই ঘোষণা দিচ্ছি ও চ্যালেঞ্জ করছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কলিগদের প্রতি। পারলে প্রতিবাদ করুন বিজ্ঞান দিয়ে। নইলে একে প্রকাশ্যে মিথ্যা বলুন এবং ইসলামের সত্যকে সত্য বলে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করুন। সরকারকে বলব, দ্রুত তওবা করুন এবং শিক্ষা সিলেবাস থেকে এসব কুফরী আক্বীদার বই ও লেখনী বাতিল করুন। নইলে আল−াহ্র গযবকে ভয় করুন। ইতিমধ্যেই নানা ভাইরাসের গযব একটার পর একটা নাযিল হচ্ছে। অতএব দ্রুত সাবধান হৌন! আমাদের সন্তানদের ‘নাস্তিক’ বানানোর চেষ্টা করবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন- আমীন!
বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারী সাতক্ষীরার বুলারাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ আলী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন বিখ্যাত আহলে-হাদিস আলেম ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুর থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান যথাক্রমে ১৬তম ও ৫ম হয়ে। অতঃপর তিনি কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং খুলনার সরকারি মজিদ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পিএইচডি গবেষণার জন্য ইংল্যান্ডে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অর্জন করলেও পরবর্তীতে আর যাননি। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে খন্ডকালীন লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। এই বিভাগ থেকেই ২০১৬ সালে অবসর নেন। তিনি লেখালেখি করেন রাজনীতি, অর্থনীতি্ সাহিত্য, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘আহলে-হাদীস আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান আমীর। মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমূহ মূলত ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়, আহলে-হাদীস আন্দোলন, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামি খেলাফতের প্রাচীন ও বর্তমান অবস্থার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক পেশাগত কাজে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন। আরবি, ফার্সি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে। পাঠক সমাদৃত মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর বই সমগ্র হলো ‘আহলে হাদীস আন্দোলন কী ও কেন’, ‘জীবন দর্শন’, ‘ইনসানে কামেল’, ’ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ‘তিনটি মতবাদ’ ইত্যাদি। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসেবে হজব্রত পালন করেন তিনি।