বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা সন্তানের অনেক কিছু কেন বাবা মায়ের মত, আদিকাল থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে যে- সকল জীবের জীবকোষে থাকা এক রকম অণু ডিএনএই এর জন্য দায়ী। জীবনের সব বৈশিষ্ট এই ডিএনএ'তেই অণু-বিন্যাসরূপী বার্তা রূপে নিহিত থাকে। এই বার্তাকে ডিএনএ বহন করে নিয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে লক্ষ লক্ষ বছরের ধারায়। কোষের মধ্যে সেই বার্তা বাস্তবায়িত হয়ে জীবনের যাবতীয় প্রকাশ ঘটায়- জীবের গঠন ও আচরণের দিক থেকে। কী রকম সেই অণু ডিএনএ? কীভাবে এটি জীবনের বার্তা ধারণ করে, কীভাবে তা বাস্তবায়িত করে, এমন সব প্রশ্নে আমাদের দারুণ কৌতুহল থাকবে সেটি খুবই স্বাভাবিক। আধুনিক ডিএনএ বিজ্ঞান, যা আজকের জীব বিজ্ঞানের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে, শুধু সেই প্রশ্নগুলাের চমকপ্রদ সব উত্তরই দেয়নি, বরং ডিএনএ’র নানা দিক উৎঘাটনের সুযােগে জীব বিজ্ঞানকে নিয়ে গেছে এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রায়। এর মাধ্যমে যেই জিন কারিগরি সম্ভব হয়েছে। তা নানা জীবের শারীরবৃত্তের উপর হস্তক্ষেপ করে মানুষকে এক অভাবনীয় সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। সেই সম্ভাবনার অনেক সুফল এখনই আমরা ভােগ করতে শুরু করেছি, যদিও ভবিষ্যৎটি আরাে অনেক বেশি চমকপ্রদ। সেই সঙ্গে জীবনের নিয়ামক বার্তার উপর হস্তক্ষেপ করার মধ্যে যে ঝুঁকি রয়েছে তাও আমাদেরকে বুঝতে হচ্ছে অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে।
মুহাম্মদ ইব্রাহীম (জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৫) বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক এবং বিজ্ঞান সংগঠক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি সেন্টার ফর মাস এডুকেশন ইন সাইন্স (সিএমইএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সত্তরের দশক থেকেই তিনি এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞান চর্চার গ্রামীণ আনন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এর একটি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় অবস্থিত। তিনি বিজ্ঞান সাময়িকী নামক একটি মাসিক বিজ্ঞান মাসিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই। ২০০৬ সালে তাকে জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হয়।