বৈষ্ণব কবিতাবলী-র অধিকাংশ কবিতাই বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সবগুলিকে একত্রিত করে বর্তমান সংকলন। এই গ্রন্থে কবি শ্রীচৈতন্য এবং রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক কবিতাগুলোকে যথাক্রমে গৌরাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ এই দুটি পর্যায়ে সন্নিবিষ্ট করেছেন। মূল বৈষ্ণব- পদাবলীর মতোই রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক কৃষ্ণাঙ্গ পর্যায়ে জন্ম, বাল্য, প্রেম, নৌকাবিলাস, কলহান্তরিতা, বিপ্রলব্ধা ইত্যাদি বিভিন্ন রসভাবের কবিতা এ কাব্যগ্রন্থেও রয়েছে, কিন্তু কবি এদের প্রত্যেকটিকে পৃথক উপ-পর্যায় হিসেবে উল্লেখ করে তার সাথে আরও দুটি উপ-পর্যায় কিছুটা অভিনবভাবেই উপস্থাপিত করেছেন—ছিন্নলতা এবং উত্তরণ। শ্রীকৃষ্ণের মথুরাগমনের পর রাধিকার বিরহ নিয়ে রচিত পদগুলো আমাদের কাছে মাথুর বলে পরিচিত, কিন্তু সম্ভবত শব্দটির ধ্বনিব্যঞ্জনা মনঃপূত না হওয়ায় কবি এ অংশকে ছিন্নলতা বলে উল্লেখ করেছেন। উত্তরণ রাধা-কৃষ্ণের প্রেম থেকে উদ্ভুত দর্শনের কাব্যকথা । সাবেক পদকর্তাদের বৈষ্ণব পদাবলীতে বিভিন্ন রসভাবের কবিতাগুলো এমন সুনির্দিষ্টভাবে পর্যায় বা উপ-পর্যায়ভুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে এই কাব্যগ্রন্থে পর্যায় বা উপ-পর্যায়ের সন্নিবেশটিকে কবির নিজস্ব অন্তর্বীক্ষণ হিসেবেই দেখা ভালো। অবশ্য এর ফলে কবিতাগুলির রসধারা সুনির্দিষ্ট হওয়ায় পাঠকের কাছেও তা অধিকতর সহজ হয়ে ওঠে। শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আঁকা প্রচ্ছদ এবং আভ্যন্তরীণ অলংকরণ এ কাব্যগ্রন্থের বর্ধিত সম্পদ।