"ঢাকার মসলিন" বইটির 'সম্পাদকের কথা' অংশ থেকে নেয়াঃ আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে আমরা কিছু হয়ত জানি, কিন্তু অনেক কিছু আমাদের অজানা। যদি আমরা নিজেদের সম্পর্কে, নিজেদের দেশ সম্পর্কে না জানি তাহলে জাতি হিসেবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াবাে কিভাবে? কি হবে আমাদের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের? এ দেশটিকে গড়ে তুলতে হলে, জাতি হিসেবে বুক টান করে দাঁড়াতে হলে, সবার আগে জানতে হবে এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য। আমাদের দেশটি সম্পদে এখন গরিব হতে পারে কিন্তু ইতিহাস ঐতিহ্যে নয়। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে সম্পদে ধনী কিন্তু ইতিহাস ঐতিহ্যে গরিব। তাই যদি আমাদের জানা থাকে নিজেদের সম্পর্কে, তাহলে উজ্জীবিত হতে পারবাে আমরা দেশ গড়ায়। এ জানার শুরুটা ছােটবেলা থেকে হলেই সবচেয়ে ভালাে। দেশ বদলাবে তাে তারাই যারা আজ ছােট। অন্ধকারে তারাই তাে জ্বালাবে আলাে। আর এ কারণেই আমাদের এই আয়ােজন–ইতিহাস ঐতিহ্য সিরিজ। আমাদের দেশে ঐতিহ্য, সম্পদ—এসব বিষয় সহজ ভাষায়, সেরা লেখকদের লেখায় তুলে দেয়া হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে। তবে, আমরা এদিকেও লক্ষ্য রাখবাে যাতে অতি সাধারণ একজন পাঠকও বইটি পড়ে বিষয়টি বুঝতে পারেন। ঢাকার মসলিন নিয়ে আমরা এখনও গর্ব করি। সপ্তদশ দশকে, মুঘল আমলে এ শিল্প বিকশিত হয়েছিলাে। ঢাকার মসলিন তখন রপ্তানি হতাে ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশে তাে বটেই, ইউরােপ আফ্রিকায়ও। মসলিন নিয়ে কিন্তু লেখা হয়েছে কম। বাংলাভাষায় অধ্যাপক আবদুল করিমের ‘ঢাকাই মসলিন’ই এ ক্ষেত্রে পথিকৃত। তিনি বইটি রচনা করেছিলেন প্রধানত ইংরেজি ভাষায় রচিত দু’তিনটি গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপিকে ভিত্তি করে। তবে আমাদের কিশােরদের বা সাধারণ পাঠকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য মসলিন বিষয়ক কোন গ্রন্থ নেই। বর্তমান বইটি যে উদ্দেশ্যেই রচিত এবং বইটিরও ভিত্তি অধ্যাপক করিম ব্যবহৃত সেই ইংরেজি দলিল-দস্তাবেজ ও ‘ঢাকাই মসলিন' বইটিতে ব্যবহৃত মসলিন সম্পর্কিত ছবিগুলি রক্ষিত আছে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যালবার্ট মিউজিয়াম ও ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে যা বর্তমানে বৃটিশ লাইব্রেরির অন্তর্গত। এ ছবিগুলি আবার ছাপা হয়েছিলাে ড. হামিদা হােসেন রচিত 'কটন উইভার্স অফ বেঙ্গল’ নামক গ্রন্থে। এ বইয়ের ছবিগুলি ঐ দু’টি উৎস থেকেই সংগৃহীত।
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।