বাংলাদেশে কম্পিউটার শেখার হিড়িক পড়ে নব্বইয়ের দশকে। এসময়ে গড়ে ওঠে দেশের প্রায় সর্বত্রই ওলি-গলিতে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্য ট্রেনিং সেন্টার। সে সময় না ছিল কোন মানসম্পন্ন সিলেবাস, না ছিল প্রশিক্ষণের মানদন্ড পরিমাপের কোন ব্যবস্থা। ছিল বগুড়ার নট্রামস-এর মত হযবরল কতিপয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। তবে এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ বড় আয়োজনের কোনকিছুর শুরুটা এমনই হয় বটে। আমি সেই সময়ের এবং তৎপূর্বের একজন আইসিটি ও কম্পিউটার লেখক। আমার প্রণীত সর্বপ্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ খ্রিঃ। বইটি ছিল “WordStar 4.0”. এটাই ছিল বাংলায় লেখা কোন বাঙালী লেখকের বিশ্বের প্রথম বই। অতঃপর পাঠক মহলের চাহিদা পূরণে এক এক করে অদ্যাবধি প্রকাশিত হয় আমার প্রণীত প্রায় শতাধিক আইসিটি ও কম্পিউটার বিষয়ক বই। সেই থেকে আমার একটা চাহিদা ছিল তা হলো সরকারিভাবে প্রণয়ন করা হোক যুগোপযোগী প্রতিটি কোর্স ও তার মানসম্পন্ন সিলেবাস। অতঃপর বেশ দেরিতে হলেও এই দায়িত্ব পালন করে চলেছে ’বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড’ (বিটিইবি)। আজ দেশের সরকারি ও বেসরকারি আইসিটি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার একমাত্র নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিইবি। বেসিক ট্রেড কোর্স-সমূহ, পলিটেকনিক-গুলোর ডিপ্লোমা কোর্স-সমূহ, কারিগরি শিক্ষা কলেজসমূহসহ নানাভাবে চলছে বিটিইবির সিলেবাস মোতাবেক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা; প্রতি বছর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে ওঠছে লক্ষ লক্ষ আধুনিক প্রযুক্তি আইসিটি ও কম্প্টিউার জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি। এসব জনশক্তি দেশে ও বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছে। বিটিবির উদ্যোগে স্বার্থক হতে চলেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের দক্ষ কারিগর তৈরীর ক্ষেত্র। শৈণ শৈণ গতিতে এগুচ্ছে ডিজিটালায়নের দিকে আমাদের সোনার বাংলাদেশ। আজ আনন্দের সাথে বলতে পারছি যে, এমনটায় চেয়েছিলাম। এজন্য বিটিইবি কর্তৃপক্ষকে জানাই দেশবাসির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ। দেশের প্রবীণ আইসিটি ও কম্পিউটার লেখক হিসাবে ভূমিকা রাখতে চাই বিটিইবির এই উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে। এরই সুফল হিসাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রণীত এই বই। ’বিটিইবি’র বেসিক ট্রেড কোর্স ৩৬০ ঘন্টা (৩/৬ মাস) মেয়াদী ’সার্টিফিকেট-ইন-‘ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং’ -এর সিলেবাস মোতাবেক ব্যাপক তথ্য সংবলিত প্রণীত এই বইটিতে ডাটাবেজ সিস্টেমের ভূমিকা, ডাটাবেজ এর ধারণা এবং স্থাপত্য, এনটিটি রিলেশনশিপ ডায়াগ্রাম ব্যবহার করে ডাটা মডেলিং, রিলেশনাল ডাটা মডেল, রিলেশনাল অ্যালজেবরা, রিলেশনাল ডাটাবেজ স্ট্যান্ডার্ড এর এসকিউএল, ডাটা মডেল ডিজাইনের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া হিসেবে নরমালাইজেশন, রিলেশনাল ডিবিএমএস-এ এসকিউএল ব্যবহারের বাস্তব অভিজ্ঞতা, এসকিউএল ইন্টার্যাকশন এর সাথে প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস, ডেসকটপ ডাটাবেজ প্যাকেজ, টু-টায়ার ও থ্রি-টাইয়ার আর্কিটেকচারের প্রাথমিক ধারণা এবং ইন্টারনেট ডাটাবেজ এনভায়রনমেন্ট, ডাটা ওয়্যারহাউজিং, ডাটা কোয়ালিটি ও ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ডাটাবেজের ওভারভিউ, ব্যবহারিকঃ এমএস এক্সিস, ব্যবহারিকঃ ভিজ্যুয়াল বেসিক, Extra Exercise on Database, প্রজেক্ট ওয়ার্কঃ মাইক্রোসফ্ট এক্সিস ও ওরাকল, ইত্যাদি সফলভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি অধ্যায়ের উপর আছে ব্যবহারিক অংশ, অনুশীলনী, বেসিক ইংরেজি, উত্তরমালাসহ বোর্ড প্রশ্নসমূহ, ইত্যাদি বিষয় বইটিতে ব্যাপক আলোকপাত করেছি। এগুলি সফলভাবে অনুশীলন করলে একজন প্রশিক্ষণার্থী দেশে-বিদেশে ’কম্পিউটার ডাটাবেজ প্রোগ্রামার’ পদে কর্মসংস্থানের যেকোন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার সুযোগ পাবেন। বইটিতে আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপনের ইচ্ছা থাকলেও কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সে সুযোগ পাই নাই। আশা করি, প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী উভয়েই এই বই থেকে কিঞ্চিৎ হলেও উপকৃত হবেন। আর তাহলেই আমার এই প্রচেষ্টা ও শ্রম স্বার্থক হবে।