যুগ বিবেচনায় মধ্যযুগের শেষ ভাগে মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক আব্বাসীয় খিলাফতের (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.) শাসন খুবই তাৎপর্য বহন করে। এ সময় একক মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী আব্বাসীয় খলিফাগণ এশিয়া ও আফ্রিকার বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের সার্বভৌম শাসন কায়েম রাখে। অন্যদিকে খ্রিষ্টান ইউরোপের বাইজান্টাইন শাসকগণ আব্বাসীয় খলিফাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম বিরোধী শক্তি হিসেবে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী থাকে। উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সমসাময়িক সময়ের রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের প্রমাণ বহন করে। এ সময়ে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বে মুসলিম বিশ্ব এবং ইউরোপের খ্রিষ্টান বিশ্ব সমাদৃত ছিল। সাম্যবাদী সমাজ, অর্থনীতি ও কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য নিয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য ইউরোপের তুলনায় উন্নত রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে থাকে। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় খিলাফত ও আঞ্চলিক রাজবংশের শাসনের ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতেও তারা অগ্রগামী হয়। তবে দ্বাদশ শতাব্দীতে পার্শ্ববর্তী মোঙ্গল সাম্রাজ্যের অভ্যুদয় এবং ইতিপূর্বেকার খ্রিস্টান বিশ্বের চাপিয়ে দেওয়া ক্রুসেড যুদ্ধ তাদের রাজনৈতিক শক্তিকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। তবুও এ দীর্ঘ সময়ে সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে আব্বাসীয়দের অগ্রগতি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছে। আব্বাসীয় খিলাফতের গৌরবময় শাসন ও আঞ্চলিক রাজবংশের সমৃদ্ধ ইতিহাস জানতে আলোচ্য গ্রন্থটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমাদের দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে আব্বাসীয় খিলাফত ও আঞ্চলিক রাজবংশের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত থাকায় স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ কোর্সে পাঠ্যপুস্তকের যে ঘাটতি রয়েছে তা মেটাতে গ্রন্থটি সাহায্য করবে। এছাড়াও গ্রন্থটি আব্বাসীয় খিলাফত ও আঞ্চলিক প্রাদেশিক শাসনের ইতিহাস জানতে ইতিহাসপ্রেমীদের কৌতূহল মেটাবে। মূলত আব্বাসীয় শাসনামলের ঘটনাবলির দর্পণ হিসেবে গ্রন্থটি সকলের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আশা করি।