এই সুন্দর পৃথিবীর অপরূপ একটি সৃষ্টি হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্কিড। ফুল হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণাগুণ। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলায় তেমন কোনো বই নেই। এই বইয়ে দেশীয় বুনো প্রজাতির ঔষধি অর্কিডের সংকলন, তাদের শনাক্তকরণ, বিতরণ, গঠন এবং ব্যবহারবিধিসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। বাংলাদেশের স্থানীয় ঔষধি অর্কিডগুলোতে উপস্থিত বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যাল সম্পর্কেও এখানে আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে অর্কিডপ্রেমীদের জন্য রয়েছে অনেক চমকপ্রদ তথ্য। উদ্ভিদের সক্রিয় উপাদানগুলোর বিভিন্ন ব্যবহারও সন্নিবেশ করা হয়েছে। যখন প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়, তখন পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য তাদের পরিষেবা চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়। এটি প্রতিস্থাপন করা প্রায় অসম্ভব। তাই ঔষধি অর্কিড প্রজাতির আবাদ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। সংরক্ষণ জীববিদ্যা এবং অর্কিড সংরক্ষণের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন আদি সভ্যতায় বৈজ্ঞানিক ঔষধ আবিষ্কারের আগে ব্যথা, ট্রমা এবং অন্যান্য বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধের জন্য গাছপালা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণগুলোর ওপর নির্ভর করত। ভেষজ ঔষধ কেবল এশিয়াতেই নয়, বিশ্বব্যাপী অনুশীলন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কয়েকটি মহাদেশে অর্কিড পুষ্টি বা রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইউরোপীয় এবং আমেরিকান ফার্মাকোপিয়ায় বর্ণিত ভ‚মধ্যসাগরীয় অর্কিড এবং উত্তর আমেরিকান ঈুঢ়ৎরঢ়বফরঁস গুলোর নির্যাস থেকে প্রাপ্ত ‘সালেপ’ (ঝধষবঢ়) খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল। চীনা, জাপানি এবং কোরিয়ান বিজ্ঞানীরা ঐতিহ্যবাহী ওষুধে ব্যবহৃত অর্কিড প্রজাতির অধ্যয়নের বিষয়ে খুবই আগ্রহী। বর্তমানে বাংলাদেশে ঔষধ নিয়ে প্রচুর গবেষণা রয়েছে। তবে ইন্টারনেট জ্ঞানের পূর্ব পর্যন্ত এই জাতির কাছে মূলত অর্কিডের জ্ঞান এই ক্ষেত্রে খুব কম ছিল। তাই বইটিতে বাংলাদেশে ব্যবহৃত ঔষধি অর্কিডগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সংক্ষেপে অর্কিডের শনাক্তকরণ, বিতরণ, গঠন, আবাস এবং ফুলের বৈশিষ্ট্য, কীভাবে তারা ব্যবহৃত হয় এবং তাদের ফার্মাকোলজি বর্ণনা করা হয়েছে। অর্কিডের ভেষজ ভ‚মিকা এবং ব্যবহারবিধির একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে যাতে এশীয় মহাদেশের অনেক বাঙালি পাঠক উপজাতিদের প্রথাগত ওষুধের সাথে পরিচিত হতে পারে, সেই সাথে বিভিন্ন ঐতিহ্যও বর্ণিত হয়েছে। সাধারণ পাঠকের জন্য অর্কিড থেকে আহরিত জৈব রাসায়নিক যৌগ উপাদানগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী হবেন।