কিছু অনুভূতি কিংবা কিছু কথা যা কখনই বলা হয়ে ওঠে না প্রাণপ্রিয় মানুষকে, অথবা সেইসব কথা সহজ-সাবলীলভাবে উপস্থাপন করলেও হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছায় না; সেই অব্যক্ত বন্ধনীগুলোই কবিতা হয়ে মানুষের আত্মার সাথে মিশে যায়। অনেকের কাছে কবিতার শব্দচয়ন নিয়ে কিছু আপত্তি দেখা যায়। তাদের মতে, এই কবিতা অশ্লীল, ওই কবিতা দুর্বোধ্য, সেই কবিতা জীবনবিমুখী ইত্যাদি ইত্যাদি। কবিতা যেহেতু জীবনের অপ্রকাশিত কিছু অনুভূতি, কিছু অদৃশ্য বিপ্লব; তাই একে কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে রাখতে নেই। কবিতাকে গণ্ডিতে বাঁধতে গেলে কবিতা তার স্বভাব হারিয়ে ফেলে, নিজের বুলি নয় বরং হয়ে ওঠে অন্যের কলের পুতুল। প্রেমের ক্ষেত্রেও এই কথাটি একইরকম সত্য। যা কিছু সুন্দর, যা কিছু চিরন্তন তাই প্রেম। কিন্তু এই সুন্দর আর চিরন্তনের সংঘাত প্রত্যেক হৃদয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিচ্ছবি তৈরি করে বিধায় প্রেমকেও এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায়নি। প্রেম কখনও আন্দোলন, প্রেম কখনও স্বাধীনতায়, কখনও-বা শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনায়, একাকীত্বও কখনও প্রেম, প্রেম কখনও না পাওয়ায়, প্রেম কখনও প্রগাঢ় বন্ধুত্বে, প্রেম কখনও ঘৃণায়, প্রতিশোধে, হিংসায়, লোভ-লালসায়, অর্থাৎ প্রেম সার্বজনীন, সর্বব্যাপী। ‘অমানিশা’ আমাকেও জীবনকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে সাহায্য করেছে। প্রেম যে এক আদিম সত্তা এবং তা যে চিরনতুন, যাকে ভালোবাসি তার মধ্যে অবিকল নিজেকে দেখতে পাওয়ার যে উন্মত্ততা, সেই উন্মাদনাই ফুটে উঠেছে প্রত্যেকটি কবিতায়। প্রেমের শুরুতে নিজেকে চেনার ধাপ থেকে শুরু করে অনেক কটা জীবন কিংবা মৃত্যু পার হয়ে আসার পরও ঠায় দাঁড়িয়ে দেখি আমার প্রেম সেই একই জায়গায় আছে। এখানে প্রত্যেকটি কবিতা ধারাবাহিক। শুরু থেকে শেষ নয়, বরং শুরু থেকে নতুন শুরু। পাঠকগণের ক্লান্তি দূরীকরণ এই কবিতার উদ্দেশ্য নয়, বরং জীবনের গভীরে, প্রেমের গভীরে, মৃত্যুকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়াই এর উদ্দেশ্য। তাহলে আসুন একসাথে প্রবেশ করা যাক, এই ‘অমানিশা’র অতল আঁধারে। অনিন্দ্য প্রাঙ্গন ২৬ নভেম্বর ২০২২