১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল। ভাষা আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে জন্ম নিয়েছে ১৯৪৮ সালে ‘ছাত্রলীগ’ এবং ১৯৪৯ সালে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। দুটি সংগঠনের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক খুব নিবিড়। তাঁর হাত ধরেই ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ বেড়ে উঠেছে। পূর্ণতা পেয়েছে। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু মুজিবই মধ্যমণি। তাঁর সফল নেতৃত্বেই বাঙালি জনগণ জেগে উঠেছে, ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
পাকিস্তানি শাসকরা তাঁকে বারবার গ্রেফতার করেছে। কারাগারে কেটেছে তাঁর জীবন-যৌবনের মূল্যবান দিনগুলি। আন্দোলনের পথ ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রি হবার, সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার লোভনীয় প্রস্তাবও দিয়েছে পাকিস্তানি শাসকরা তাঁকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে টলানো যায়নি। ঘৃণাভরে সেসব প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। সারাজীবন তাঁর ছিল একটাই স্বপ্ন। সেটা হলো বাঙালি জনগণের মুক্তি। এ মুক্তি শুধু-পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্তি নয়। এ মুক্তি পরাধীনতা থেকে মুক্তির পাশাপাশি ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের, স্বাধীন বাঙালি জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর ডাকেই মুক্তিপাগল বাঙালি জনগণ যুদ্ধ করেছে, স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার আগেই তাঁকে খুনীচক্র নির্মম নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করেছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল দীর্ঘ সময় এদেশের নতুন প্রজন্মকে এই খুনী, এই বিশ্বাসঘাতকেরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে দেয়নি, বাংলাদেশের জনের সঠিক ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ অন্ধকারে রাখা হয়েছে নতুন প্রজন্মকে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের মুছে ফেলা সেই সংগ্রামের স্মৃতিগুলো আজকের শিশু-কিশোরদেরকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্যই লেখা হয়েছে এই বইখানি।