ফ্ল্যাপে লিখা কথা ‘মির্জা আসাদউল্লা বেগ খাঁ’ বিশ্বের কাব্যামোদী সমাজে ‘মির্জা গালিব’ নামেপ পরিচিত। গালিব তাঁর গজলের মাধ্যমে বিশ্বমানবদের হৃদয় জয় করেছেন্ । গালিব শুধু ভারতীয় উপমহাদেশের নয় বিশ্বের সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ কবিদের একজন এবং বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি।
ভূমিকা উপমহাদেশীয় বলয়ে স্মরণকারের সেরা কাব্য প্রতিভা ‘মির্জা আসাদউল্লাহ খাঁ গালি ‘ ছিলেন মোগল বংশোদ্ভুত। তাঁর জন্ম আগ্রায় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর । তাঁর পিতামহ কুকানবেগ বনে মির্জা তাবাসসুম অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সমরখন্দের অধিবাসী ত্যাগ করে উপমহাদেশে চলে আসেন। এবংআগ্রায় বসবাস শুরু করেন। গালিবের জীবন-চরিত লেখক এস, এম ইকরাম -এর ভাষায় গালিবের কবিতার শিল্পরূপকে শুধুমাত্র আগ্রার তাজমহলের সাথেই তুলনা করা যায়, যা কালের সকল ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে স্মমহিমায় উজ্জল হয়ে আছে এবং অনন্তকাল থাকবে।
গালিবের মাতৃভাষা ছিল তুর্কী। কাব্যচর্চা করেছেন ফারসি ও উর্দু ভাষায়। ক্লাসিক উর্দুর (উর্দুয়ে মোয়াল্লা) শেষ প্রতিনিধি মনে করা হয় গালিবকে । কিন্তু কলাম গন্য হয় চির আধুনিক রূপে। তাকে নতুন এবং পুরাতনের মহা সঙ্গম রূপে বিবেচনা করা হয়। তার ফারসি রচনাও নি:সন্দেহে অত্যন্ত উচ্চমানের। ফারসি সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে ঢাকার মৌলবি আলী আহমদ জাহাঙ্গীর নগরীর সুদীর্ঘ কলমযোদ্ধাকে এ প্রসঙ্গে স্মরনীয়রূপে গন্য করা হয়। উর্দু গদ্য সাহিত্যও তাঁর অবদান অসাধারণ। উর্দু আধুনিক গদ্যের উদগাতারূপেও গালিবকে স্মরণ করা হয়।
শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ-জাফর-এর একজন সম্মানিত অমাত্য, দরবারী কবি এবং শাহজাদাগণের উস্তাদ ছিলেন এই অমর কবি। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে মোগল সাম্রাজ্যের পতন এবং দিল্লী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার পর পুনরায় ইংরেজ সরকারের সুনজর আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি । মৃত্যুকাল (১৮৬৯ খৃ: ১৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত তার ভাতা এবং দরবারী সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকলেও দখলদার ফিরিঙ্গী শাসনের তমসাছন্ন পরিবেশে গালিব ছিলেন বিক্ষুব্ধ,অতৃপ্ত।
বাংলার বর্তমান প্রজন্মের নিকট ‘মির্জা গালিব ’ অতীতকালের িএকটি অস্পষ্ট নাম হলেও প্রকৃত সংস্কৃতিবান রসজ্ঞা মহলে গালিবের অমন রচনাবলীর প্রতি শ্রদ্ধার কোনো কমতি নেই। তবে বাংলা ভাষায় এ অঞ্চল থেকে ইতিপূর্বে এ অসাধারণ কবির জীবন বা সাহিত্য সম্পর্কিত কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। নতুন বংশধরদের সামনে গালিবকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে মুহম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাস অনূদিত এ বইটি প্রথম প্রয়াস বলে মনে হয়। তাজমহলের মতোই কবি গালিবের কালোর্ত্তীন সাহিত্য সম্ভারের সাথে বাংলার বর্তমান প্রজন্মের পাঠকগনের পরিচিতির সেতুবন্ধন রচনার ক্ষেত্রে এ বইটি স্মরণীয় হবে বলে আমি আশাবাদী। মুহিউদ্দীন খান সম্পাদক, মাসিক মদীনা বাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০ ১লা বৈশাখ ১৪০৩
Muhammad jalal Uddin Bisshas জন্ম ১০ জানুয়ারি ১৯৫৯। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা ও থানার চৈতা গ্রামে বিখ্যাত বিশ্বাস পরিবারে। পিতা মুহম্মদ তছিমুদ্দীন বিশ্বাস (১৯১৭-১৯৮০), মাতা অহিদা খাতুন (১৯২৩-২০০৮)। এগারাে ভাই-বােনের মধ্যে নবম। শিক্ষা-দীক্ষা ভারতে। ভাষা শিক্ষা ও ভাষা চর্চা আজীবনের সাধনা। সাংবাদিকতা ও গণসংযােগে ডিপ্লোমাও করেন গত শতাব্দীর আশির দশকে। বহুমুখী প্রতিভাধর কবি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিড়ের মাঝে আমরা দুজন’ (১৯৮৯) কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আছে কাব্য আমপারা' (২০০০), ঢাকা, কালিদাসের মেঘদূত' (২০০৬), ইকবালের শ্রেষ্ঠ কবিতা' (যন্ত্রস্থ), গালিবের শের (যন্ত্রস্থ)। আছে। উপন্যাস 'যমুনার ধারা বহে' (২০০৪), মােল্লা নাসিরুদ্দীন (২০০৪), অনূদিত উপন্যাস ‘রক্ত রাঙা পথ’ (২০০৫), একটি প্রেমের স্মৃতি' (২০০৮), মূল ভাষা ঠেট আউধী থেকে অনুবাদ করেন মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদমাবত' (২০০৮)। বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (স.) সম্পর্কে তাঁর প্রণীত ও অনূদিত গ্রন্থ সংখ্যা বাংলা ভাষায় সম্ভবত তারই সবচেয়ে বেশি। ধর্ম-ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ভাষাতত্ত্ব, ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থাদিও প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা এবং কলকাতা থেকে। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ‘মােগল সম্রাট হুমায়ুন’ (২০০৫), মােগল শাসন ব্যবস্থা' (২০০৭), আলবিরুনির ‘ভারতত্ত্ব' (২০০৭), ‘ফিকহুস সিরাত' (২০০৮), ‘বেহেস্তি জেওর (২০০৯) প্রভৃতি গ্রন্থ। ঐতিহ্য'-র তাঁর নবতম সংযােজন ড. ভােলানাথ তেওয়ারির ‘ভাষাবিজ্ঞান ও মােগল সম্রাট বাবরের আত্মকথা 'বাবরনামা'। ইবনে বতুতার সফরনামা (২০০৪) সহ এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৮০-র অধিক। জেলা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার মহান সন্তান শহীদ তিতুমীর, মাওলানা আকরম খাঁ, আল্লামা রুহুল আমীন, শেখ আবদুর রহিম, কবি শাহাদাত হােসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখের সােনালি শৃঙ্খলের ধারাবাহিকতায় ইনি অন্যতম মহান সংযােজন বলে অভিহিত হন। পেশা সাহিত্য।