পাবলিশার’স নোট মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’র (১৮৮০ - ১৯৭৬) উপর লেখা অনেক বই-ই বাজারে মোটামুটি এভেইলেবল, কিন্তু উনার নিজের লেখা, কথা, বক্তৃতা, বিবৃতি, ঘোষণা খুব একটা পাওয়া যায় না। আজকে উনি মারা যাওয়ার ৪৫ বছর পরেও উনার কোন রচনাসমগ্র বাংলাদেশে ছাপা হয় নাই। এইটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা না কোন, বরং কালচারাল ফেইলওরের ঘটনা। ভাসানীর লেখা ছাপাইতে হইলে ভাসানীর রাজনীতির অনুসারী হওয়াটা মাস্ট না, কিন্তু উনার রাজনীতি’র আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি এই হিস্ট্রিক্যাল ডকুমেন্টগুলা পাবলিক স্পেইসে এভেইলেবল থাকাটা জরুরি। তাইলে কথা বলতে যেমন সুবিধা, হিস্ট্রি’র ঘটনাগুলা ক্লিয়ারও হইতে পারে অনেকটা, নানান জনের নানান কথা-বার্তা, ভার্সনের ভিতর দিয়া। এইরকম একটা জায়গা থিকাই আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একটা সময়ের লেখাগুলা এক জায়গায় রাখার চেষ্টা হিসাবে এই বইটা ছাপানো। লেখাগুলার প্রায় সবগুলাই ১৯৭২ সালের সাপ্তাহিক “হক-কথা” পত্রিকায় ছাপা হইছিল। “অহিংসা ও বিপ্লব” এবং “বাংলাদেশে শ্রেণী সংগঠনের ইতিহাস” বাদে এই বইয়ের আর অন্য কোন লেখা উনার কোন বইয়ে ছাপা হইছে বইলা আমাদের জানা নাই। এই পর্যন্ত উনার লেখা-পত্র নিয়া যেইসব বই ছাপা হইছে, তার একটা ছোট লিস্টও আমরা বইয়ের শেষে রাখছি। মওলানা ভাসানী’র আরো লেখা-পত্র দেখতে চাইলে এই বইগুলারও খোঁজ করতে পারেন। তো, আসেন, পরের মুখে ঝাল খাওয়ার আগে, ভাসানীর নিজের কথাও কিছু শুনি আমরা! জুন, ২০২১
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। হাজী শারাফত আলী ও বেগম শারাফত আলীর পরিবারে ৪ টি সন্তানের জন্ম হয়। একটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে। মোঃ আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ছেলে-মেয়ে বেশ ছোট থাকা অবস্থায় হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন ছোট শিশু আব্দুল হামিদ খান। পিতৃহীন হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে ১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের কাজ করেন এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে আসাম গমন করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অণুপ্রাণিত হন।[৭] ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার সহধর্মিণী আলেমা খাতুনকে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম রাখা হয় "ভাসানীর মাওলানা"।[৭] এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।