"নজরুল রচনাবলী - ১ম খণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া: ‘নজরুল-রচনাবলী’-র একটি পরিশােধিত ও প্রামাণিক পাঠ, প্রণয়নের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদনায় নজরুল-রচনাবলী : জন্মশতবর্ষ সংস্করণ-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হলাে। এ খণ্ডে সংকলিত হয়েছে নজরুল ইসলামের চারটি কবিতার বই ‘অগ্নি-বীণা' (১৯২২), ‘দোলনচাঁপা (১৯২৩), ‘বিষের বাঁশী (১৯২৪) ও ‘ভাঙার গান’ (১৯২৪), একটি গল্পের বই-- ‘ব্যথার দান (১৯২২), একটি উপন্যাস-“বাঁধনহারা’ (১৯২৭) এবং দুটি প্রবন্ধের বই-যুগবাণী (১৯২২) ও ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী' (১৯২৩)। কবি আবদুল কাদির সম্পাদিত নজরুলরচনাবলী, বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলী:নতুন সংস্করণ, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমি থেকে প্রকাশিত কাজী নজরুল ইসলাম-রচনাসমগ্র ও নজরুলের উক্ত গ্রন্থসমূহের আদি ও পরবর্তী সংস্করণের প্রতিটি পঙক্তি যাচাই করে এ খণ্ডের পাঠ প্রণীত হয়েছে। পাঠ প্রস্তুতকালে আধুনিক বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এতে সংযােজিত হয়েছে, ‘অগ্নি-বীণা' কাব্যের প্রথম সংস্করণে প্রকাশিত নজরুলকৃত দুপ্রাপ্য মুখবন্ধটি। যুগবাণী-র উৎসর্গপত্রও সন্নিবেশিত হয়েছে। এগুলাে নজরুল-রচনাবলী-র পূর্ববর্তী কোনাে সংস্করণে মুদ্রিত হয়নি। বইটির সযত্ন-সম্পাদনা ও মুদ্রণ-সৌষ্ঠব সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতাে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।