ঔপন্যাসিক ও কবি শীরীন আক্তার-এর সাড়া জাগানো উপন্যাস নদী। এটি একটি সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত সমকালীন উপন্যাস বটে। প্রথম খণ্ডের ব্যাপক সারা জাগানোর ফলে তিনি দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ করেন গত বছর বই মেলায়। তারই ধারাবাহিকতায় নদী তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করার ইচ্ছে পোষণ করেন যৌক্তিক কারণে। এটাই এই সিরিজের শেষ পর্ব। তবে অন্য নামে লেখকের আরো উপন্যাস আসবে। যাঁরা আগের খণ্ডগুলো পড়েছেন তাঁরা এক নতুন নদী-কে পাবেন আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। নদী একজন সমাজ সচেতন নারী। যিনি সব বুঝেন কিন্তু বলেন না। কারণ বললে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সংসারে নানান জামেলার অবতারণা হবে। ফলে ছেলে মেয়েরা কষ্ট পাবে। আর এটা তিনি আশা করেন না। ছেলে-মেয়ে স্বামী নিয়েই তো সুখী সংসার, যা সকল নারীরই কাম্য। কিন্তু কয়জন আছেন নিজেকে বিসর্জন দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো দুর্দিনের যাত্রী হয়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি দিতে প্রস্তুত সদা। তিনি মচকেছেন কিন্তু ভেঙে যাননি। তিনি প্রতিবাদ করেনছেন, কিন্তু সংসার ছেড়ে চলে যাননি। নদী একটি ভিন্নভাবে প্রতিবাদের নাম। এর আগে কমই লেখা হয়েছে এই ধরণের উপন্যাস। এমনি এক নারীর নিদারুণ জীবনালেখ্য নদী উপন্যাস। অন্যান্য খণ্ডের মতো এই খণ্ড না পড়লে নদীকে সম্পূর্ণ জানা যাবে না। কবি অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় পাঠকের মনে দোলা দিতে সচেষ্ট ছিলেন সবসময়, যার প্রমাণ পাওয়া যাবে প্রতিটি পর্বে। আশা করি সবার ভালো লাগবে। শুভকামনা। আবুল খায়ের কবি, সম্পাদক ও প্রকাশক।
অধ্যাপক শীরীন আক্তার একই সাথে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সমাজসেবক, নারীনেত্রী। তাঁর জন্ম ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার জীরতলীর এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পরবর্তীতে সদর উপজেলার মাইজদীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মাইজদী বাজারের নিকটবর্তী উকিল পাড়ায় বাবার বাড়ি, মাস্টার পাড়ায় শ্বশুরবাড়ি। পিতৃপরিচয় : মরহুম মাওলানা আবদুল মালেক মুন্সি, পেশায় ইউনিয়ন পরিষদের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি অবিভক্ত ভারতের কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করে নিজেকে জনগণের সেবায় নিযুক্ত করেন। আজীবন একই কাজে ছিলেন। মাতৃপরিচয় : মরহুমা আছিয়া খাতুন একজন সম্ভ্রান্ত ধার্মিক ও পর্দানশীন নারী ছিলেন। তিনিও সংসারধর্ম পালনের পাশাপাশি সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। দাদা আতর আলী মুন্সি বিখ্যাত মাওলানা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। আর নানা মফিজ উদ্দিন আহমেদও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। শিক্ষাজীবন : অধ্যাপক কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, নারীনেত্রী ও সমাজসেবক শীরীন আক্তার-এঁর তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষাজীবন ছিলো বড়োই টালমাটাল। মুক্তিযুদ্ধের কারণে তৃতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক দফা স্কুল বদল করতে হয়েছে। পরিবারের স্থান বদলের কারণে তাঁরও বদল ঘটেছে। অবশেষে মাইজদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৮০ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের আবাসিক ছাত্রী হিসেবে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেন ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে। যদিও স্বৈরাচার শাসকের আমলে সেশন জটের কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে ১৯৮৫ ও ১৯৮৭ সালে। শিক্ষাজীবনে তিনি যেমন অলরাউন্ডার ছাত্রী ছিলেন, তেমনি তূখোড় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। পেশাগত জীবন : এম.এ. পরীক্ষা শেষ করেই প্রথমে উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮৭-১৯৯২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৪/৫টি স্কুলে শিক্ষকতা শেষে ১৯৯২ সালের নভেম্বর থেকে কলেজে আজোবধি চাকরি করছেন। সংসার ও বাচ্চার দেখাশোনার কারণেই বারবার বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও দিতে পারেননি। পেশাগত জীবনে সহকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে অত্যন্ত সহৃদয় ও আন্তরিক। লেখক-জীবন : স্কুলজীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও তিনি স্বরচিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখে বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। সংসার ও পেশাগত জীবনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি লেখা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৭ সাল থেকেই স্থানীয় পত্রিকা, দৈনিক পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। বিভিন্ন দিবস, অনুষ্ঠান ও সভা সেমিনারে প্রবন্ধ-নিবন্ধ উপস্থাপন করে চলেছেন। ২০০৯ সালে একত্রে দুটো কাব্য-‘মেঘ নৌকার বহর’, ‘রক্ত ঝরা পঙক্তিমালা’; ২০১৬ সালে প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘আপন বিম্ব আত্ম মুকুরে’; ২০২১ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা’ ও প্রথম উপন্যাস ‘নদী’ (প্রথম খণ্ড) প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবিম্ব প্রকাশ থেকে বের হল উপন্যাস ‘নদী’ (২য় খণ্ড) ও ‘নদী’ (৩য় খণ্ড), খণ্ডিত চন্দ্রালোকে (যৌথ কাব্যগ্রন্থ), মায়ার ফাঁদে (একক কাব্যগ্রন্থ)