"আমরা কীভাবে চিন্তা করি" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মানুষ অনন্য জীব, কারণ তার চিন্তার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এই চিন্তা জিনিসটি কী, আমরা কীভাবে চিন্তা করি? শরীর, মন, চেতনা ইত্যাদির সম্পর্কের জটিল প্রশ্নগুলাের উত্তর এখনাে সম্পূর্ণভাবে উদ্ঘাটিত হয়নি। কিন্তু সর্বাধুনিক বিজ্ঞান এ কাজে অনেকখানি এগিয়েছে। এখন আমরা নিশ্চিত যে মস্তিষ্কই সকল চিন্তা-চেতনার আধার, এবং মস্তিষ্কের শারীরবৃত্তের সঙ্গে একে সরাসরি সম্পর্কিত করা ইতােমধ্যে যথেষ্ট সম্ভব হয়েছে। মস্তিষ্কের দ্বারা তথ্যের প্রক্রিয়াকরণই যে চিন্তা- এমন মনে করার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এখন বেশ মজবুত। এদিক থেকে কম্পিউটারের কাজের সঙ্গে চিন্তার মৌলিক মিল রয়েছে, যদিও প্রক্রিয়াকরণের বাস্তবতার দিক থেকে কম্পিউটার আর মস্তিষ্কে আকাশ পাতাল তফাত। চিন্তাকে এখন মস্তিষ্কের বিপুল সংখ্যক স্নায়ুকোষের আরাে বহু গুণ সংযােগের জালিকার মধ্যে এক রকম বৈদ্যুতিক সিগন্যালের প্যাটার্ন হিসেবে দেখা হয়। এই সিগন্যালের দ্বারাই মস্তিষ্কের নানা অংশে দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ ইত্যাদির অনভতি সষ্টি হয়। আবার দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিকে মস্তিষ্কে ধারণ করার সময় এই সিগন্যালের প্যাটার্নটি স্নায়ুকোষের সংযােগগুলােকে বলিষ্ঠ করার মাধ্যমে সেখানে স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। ইন্দ্রিয় থেকে আসা অনুভূতি ছাড়া এই স্মৃতিও চিন্তার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। আমরা কী ভাবে শিখি, বুদ্ধির পরিচয় দিই, তারও প্রক্রিয়া এর মাধ্যমেই বেশ বুঝা যাচ্ছে এখন। শুধু তাই নয় চেতনা ও আবেগের মত কঠিন সমস্যারও বুঝার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এখন অনেকখানি এগিয়ে গেছে। আমাদের চিন্তার ক্ষমতাকে এই চিন্তারই প্রক্রিয়া উঘাটনে কাজে লাগাতে পারছি, এটিই বােধ হয় মানুষ হিসেবে আমাদের সব চেয়ে বড় অনন্যতা।
মুহাম্মদ ইব্রাহীম (জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৫) বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক এবং বিজ্ঞান সংগঠক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি সেন্টার ফর মাস এডুকেশন ইন সাইন্স (সিএমইএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সত্তরের দশক থেকেই তিনি এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞান চর্চার গ্রামীণ আনন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এর একটি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় অবস্থিত। তিনি বিজ্ঞান সাময়িকী নামক একটি মাসিক বিজ্ঞান মাসিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই। ২০০৬ সালে তাকে জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হয়।