যে বাড়িটা একসময় গৃহস্থালি কাজে সারাদিনমান কোলাহলমুখর থাকত, সে বাড়িটা ধীরে ধীরে নিজেদের পুরোদস্তুর গার্হস্থ্য জীবন গুটিয়ে নিল।
যে বাড়িতে ছুটির মৌসুমে ঘর ভরে যেত মেহমানে, মাটিতে শীতলপাটি বিছিয়ে শয্যা পাততে হতো জায়গা সংকুলান না হওয়ায়, সেই বাড়িতে এখন মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়ে না বছরের পর বছর।
যে বাড়িতে প্রায় উনিশ-কুড়িটা জানালা দিয়ে রোজ সূর্যের আলো প্রবেশ করত ঘরে, সন্ধ্যে হলে নাকবারান্দায় জ্বলে উঠত বৈদ্যুতিক আলো, সেই বাড়িজুড়ে এখন থইথই অতল অন্ধকার।
পৌষের মধ্যরাত পর্যন্ত যে বাড়ির উনুনঘরে পিঠাপুলি বানানো হতো, সেই উনুনঘর থেকে এখন আর পিঠাপুলির গন্ধ ভেসে আসে না। বছর যায়, ক্যালেন্ডার বদলায়, একের পর এক পৌষ মাস এসে চলেও যায়, কিন্তু সেই উনুন ঘরের বন্ধ দরজাটা আর খুলে না।
ঋতুবদলের ঘূর্ণিপাকে প্রকৃতিতে বর্ষা আসে, পদ্মা নদী যুবতী হয়ে উঠে, চরাচর ভেসে যায় উচ্ছ্বল পানিতে। ঐ বাড়ির উঠোনেও পানি জমে, বহির্বাটি দিয়ে স্রোত আপন গতিতে চলে যায় মাঠে-ঘাটে। কিন্তু এখন আর কেউ ঘরে পানি উঠে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করে না সেখানে।
কেউ দক্ষিণের জানালা খুলে দেখে না, পানি কতটুকু বাড়ল বা কমল। প্রতি পূর্ণিমায় ঐ বাড়ির টিনের চালাতেও জ্যোত্স্না আছড়ে পড়ে। কিন্তু উঠোনে মাদুর বিছিয়ে জ্যোৎস্না দেখে না কেউ আর।
বাড়ির কোল ঘেঁষে কারো কল্পনায় অনাথের মতো একা দাঁড়িয়ে থাকে নিঃসঙ্গ শিমুল গাছ। সেই গাছজুড়ে ফুটে থাকে লাল টুকটুকে শিমুল ফুল। শিশিরের মতো টুপটাপ শব্দে তা ঝরে পড়ে। কিন্তু কোচর ভরে সেই শিমুল ফুল কুড়িয়ে নেওয়ার মতো কেউ নেই আর।
তবুও বাড়িটা অপেক্ষায় থাকে । আপনজনের ফিরে আসার অপেক্ষায়! প্রচ্ছদ: মো: সাদিতউজজামান
১৯৯৫ সালের ০২ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলায় জন্ম। তিনি পিতা মোঃ ইদ্রিস আলী এবং মাতা সায়লা পারভীন এর ছোট সন্তান। শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কমপ্লিট করেছেন কলেজ অব এপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স থেকে। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিনটি- 'নিরন্তর নৈঃশব্দ্যে', 'শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না' এবং 'আমি পাল্টে নিয়েছি রিংটোন'। তিনি 'ঝরাফুল সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন' এর সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক। ভ্রমণ, বই পড়া এবং লেখালেখি করা তার প্রিয় শখ।