বাগানের গাছে একটি ফুল আর মায়ের কোলে একটি শিশু তাদের মধ্যে তফাৎ কি বলুল তো। প্রকৃতিগত ভাবে আসলে তাদের কোন তফাৎ নেই। ফুলটি যেমন নিষ্পাপ তেমনি ছোট শিশুটিও নিষ্পাপ। শুধু তফাৎ হল শিশুটি আস্তে আস্তে মায়ের কোলে বড় হয়, আর ফুলটি আস্তে আস্তে গাছ থেকে ঝরে যায়।
তেমনি মানুষও এক সময় দূরে সরে যায়। কিন্তু মানুষের আছে সামাজিকতা বিভিন্ন চাহিদা সে কথা বলতে পারে, হাঁটতে পাওে, খাবার খেতে পাওে, বড় হয়ে ভাল-মন্দের বিচার করতে পারে। কিন্তু আমরা তো অনেক শিশুরই সঠিক পরির্চযা করি না। বাগানের যেমন আমরা পরির্চযা না করলে ফুল হয় না। ভালো ফল হয় না। তেমনি একটি শিশুরও সঠিক পরির্চযা না করলে সে ভাল মানুষ হয়ে বড় হয়ে উঠেনা। তাই আমাদের কি করা উচিত বলুন তো। প্রত্যেকটা শিশুর সঠিক পরির্চযা প্রয়োজন। কিন্তু মুখে বলা যত সহজ বাস্তবে তখটা খুব কঠিন।
এবার আমি যা বলতে চাই তা হলো। আমি কারো সাথে বিবাদ করতে চাই না। আমি চাই, সানে খোদার কাছে প্রার্থনা যে তিনি আমাদের সকলকে হেফাযত করেন। আমরা যেন সঠিক পথে পরিচালিত হয়। আল্লাহ্ সব কিছুতেই নির্দোষ উনি কোন ফাঁক রাখেননি তার সৃষ্টিতে। আমরা মেয়েরা সব সময় মন খারাপ করে বলি আল্লাহ্ আমাদের কেন যে দুনিয়াতে পাঠালেন। আমরা শুধু পরের জন্য জন্ম নিয়েছি। আসলে ঠিক তা নয়। আমার প্রিয় মা-বোনেরা আপনারা চিন্তা করে ইসলাম ধর্মের ভিতর ঢুকে দেখুন তো। আসলেই কি তাই? না আসলে তা নয়! যেখানে পুরুষরা শুধু বাবার সম্পদের ভাগ পায় আর কিছু না। সেখানে আমরা মেয়েরা বাবারটাও পাচ্ছি আবার স্বামীরও।
তুলনা মূলকভাবে কম হোক তাতে কি? এটা তো আসলে সম্পদ বড় কথা নয়, আসলে হচ্ছে ইহা ইজ্জতে সম্মান। আর আল্লাহ্ মেয়েদের জন্য প্রত্যেকটা বাবার মনে এত বড় স্থান দিয়েছেন যে তা কোন কিছুর বিনিময়েই হয় না। এখন যদি বাবা আপনাকে আদর করতে করতে শুধু ভালোবাসাই দেন একদম শাসন না করেন তাহলে কি করে হয় বলুন। আর আপনিও যদি আপনার বাবার আদরের মূল্যায়ন না করতে গিয়ে কিংবা যদি বাবার আদরের অবমূল্যায়ন করেন তাহলে আর কি করে হয় বলুন। আর আল্লাহ্ আমাদের শারীরিক গঠন এভাবে দিয়েছেন যে আমরা পুরুষের মত থাকতে মানে পুরুষের মত কাপড় না পরে বা তাদের দেখে আমরা পর্দা করব না তা ভাবাও পাপ।
আপনি এটা তো বোঝেন আপনার দামী শাড়িটা কিভাবে রাখতে হবে? আপনার অনেক টাকা, অনেক দামী গহনাগুলো কি আপনি সকলের সামনে রাস্তায় বা বাড়ির উঠানে রেখে দেবেন? না কখনও এটা করবেন না। আপনি সব সময় এগুলো সকলের অগোচরে রেখে হেফাযত করবেন। তা না হলে গচ্ছা যেতে পারে। আল্লাহ্ও তেমনি আপনাকে অনেক যতœ করে অনেক ভালোবেসে তৈরি করেছেন আর এজন্যই বলেছেন আপনার নিজেকে হেফাযত করতে।
তা না হলে আল্লাহ্র অনেক দামী মূল্যবান, উনার অনেক সখের একটা জিনিস আপনি অনেক মহব্বতের সাথে বিধাতা আপনাকে গড়েছেন, তাই আল্লাহ্র আমানত রক্ষার দায়িত্ব আপনার। তাই আপনি এত সস্তা না হয়ে নিজেকে দামী ভাবুন। নিজেকে লুকিয়ে রাখুন পর্দার আড়ালে। পর্দা করা মানেই আপনাকে বোরকা পরে, হাত মোজা, পা মোজা পরতে হবে এমন কোন কথা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হল আপনার মনের পর্দা। আপনি বাহিরে যাবেন এতকিছু পরিধান করে আর ঘরে খুব বিশ্বাস করবেন দেবরকে না তা হতে পারে না। পর পুরুষকে এতটা বিশ্বাস করা ঠিক না। সে আপনার ভালো ব্যবহার বা বিশ্বাসের সুযোগ নিতে পারে। তাই বলছি আপনি মা। একটি ছোট মেয়ের সে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আপনার কোল থেকে নেমে হাঁটতে শিখছে। তাকে খেয়াল রাখুন কোথায় যাচ্ছে কি করছে। ভালো বাচ্চাদের সাথে খেলা করলে ভালো। আর অনেক বেশি দুষ্টু বাচ্চার সঙ্গ ত্যাগ করুন। দেখা গেল আরেকটু বড় হচ্ছে।
বাহিরে যাওয়া বন্ধ করে দিন। আপনি নিজে তাকে সময় দিন। ওকে স্কুলে যান স্কুলে কি করছে খবর রাখুন। শিক্ষকদের বলুন ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে। যখন আপনার মেয়ে আরেকটু বড় হয়েছে। এবার সে বাহিরে গেলে আপনি তার সাথে যান। আর এবার কিছু দায়িত্ব ওর বাবাকে দিন। দু’জন মিলে দায়িত্ব নিন। খেয়াল রাখুন আপনাদের মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে যাচ্ছে কি করছে। আপনি, আপনারা মানে বাবা-মা যখন একটি মেয়েকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে তখন সে বিপথে যেতে পারে না। আপনার মেয়ে বড় হয়েছে দেখে শুনে ভালো ঘরে ভালো মানুষদের এবং ভালো ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিন। খবর রাখুন শশুর বাড়িতে মেয়ে কেমন আছে। ওরা আপনার মেয়েকে মেনে নিয়েছে কিনা। আপনার মেয়ে ওদের বাড়ির লোকদের সাথে মিশতে পারছে কিনা। যদি ভালো থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই। সব বাবা-মাই চাই তাঁদের মেয়ে সুখে থাকুক ভালো থাকুক। এবার আসছে স্বামীর কথা। মেয়েরা সব খুব নরম মনের মানুষ হয়। তারা ভয়ও পায় প্রথমে শশুর বাড়িতে। আপনি স্বামী হিসেবে তার পাশে থাকুন। স্ত্রীর পাশে থাকা মানে এই নয় আপনি স্ত্রীর জন্য মায়ের সাথে ঝগড়া করবেন। ভাই বোনের সাথে ঝগড়া করবেন। বাবার সাথে বেয়াদবী করবেন আপনি দায়িত্ব নিন মাকে মায়ের মত করে বোঝান আপনার স্ত্রীকে মেয়ে ভাবতে। আর ভাই বোনদের বোঝান স্ত্রীকে বোন ভাবতে। বাবাকে বোঝান আপনার স্ত্রীকে মেয়ে ভাবতে। নিজের স্ত্রীকেও বোঝান কিভাবে সে সবার সাথে মিলেমিশে চলবে। যখন দেখবেন সব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। দুর থেকে আসা মেয়েটা আপনাদের সকলের সাথে মিশে গেছে।
আর আপনার মা বাবা ভাই বোন সকলেই তাকেও আপন করে নিয়েছে। কিন্তু দেখা যায় কি জানেন প্রায় ছেলেরাই বউ-শাশুরি ঝগড়া লেগেছে এর মধ্যে আপনি এসে হুট করে বউয়ের পক্ষ নিয়ে মায়ের সাথে লেগে পরলেন। মাকে যা ইচ্ছে তা বলা শুরু করে দিলেন। মা তো এবার ছেলের বউয়ের প্রতি আরও রেগে গেলেন। মা বলতে শুরু করলেন বান্দীর ঝি তুই কেমনে শান্তিতে থাকিস আমি দেখব। তানা হলে দেখা যাবে আপনি মায়ের পক্ষ নিলেন। তারপর মায়ের কথা শুনে বউকে যা ইচ্ছে তাই বকা দিলেন। এভাবে বললেন যে তুই পায়ের জুতা লাগলে লাগবি না হলে চলে যাবি। আমার মায়ের সাথে লাগতে যাসনে তোর এত বড় সাহস। এবার দেখা গেলো বউও রেগে গিয়ে তুলুম ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। আপনাকে বলছে যে তুই আমাকে পায়ের জুতা বললি, থাক তুই তোর মাকে নিয়ে। আমি গেলাম আমার বাপের বাড়ি। এভাবে কি সংসার চলে ভাই বলুন। আপনি সমস্যা না কমিয়ে আরও বাড়িয়ে দিলেন। এটা মোটেও উচিত না। একজন মা যখন শাশুড়ি হন একটা মেয়ে যখন তার সংসারে এসে উড়ে এসে জুড়ে বসে তখন মায়ের একটু কষ্ট হয় তাকে মানিয়ে নিতে। তাই একটু সময় লাগে মেনে নিতে। আর মেয়েদের বুদ্ধি একটু কম থাকে আর এরা একটু হিংসা কাতরও হয়ে থাকে। তাই হয়ত এমনটা হয়। তবে আপনি মাকে, মানে আপনার মাকে সাহায্য করেন আপনার স্ত্রীকে মেনে নিতে।
তাহলে দেখবেন সংসারে অশান্তি আসবে না শান্তি আসবে। তাহলে এখানে কি দেখা গেল একটা পুরুষের উপর দুইটা নারীর দায়িত্ব। আর শশুররা হুট করেই ছেলে বউদের মেনে নিতে পারেন। আর বলেন আমার মেয়ে তো আর আমার কাছে থাকবে না। তাই ছেলে বউই আমার মেয়ে। কিন্তু শাশুড়িরা একথা এত সহজে বলতে পারে না। এবার দেখুন আপনি একলা একটা পুরুষ যদি আপনার মা আর আপনার স্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন আর এই দায়িত্ব সঠিক পালন করতে পারেন তাহলে আপনার সংসার ঠিক কোন প্রকার সমস্যা নেই। তাহলে দেখুন আল্লাহ্ একটা নারীর দায়িত্ব কিভাবে পর্যায় ক্রমে এক একজন পুরুষের উপর অর্পণ করেছেন। একটি পুরুষের উপর তিনটি নারীর দায়িত্ব দিয়েছেন।
প্রাথমিক ভাবে এরা হল প্রথমে পিতা মেয়েকে, তারপর স্বামী-স্ত্রীকে, ভাই বোনকে। কিন্তু আপনারাই দেখুন কোন নারীর উপর বাধ্যতামুলক দায়িত্ব নেই। একজন নারীর ভার আল্লাহ্ তিনটি পুরুষকে দিয়েছেন সাথে আবার ভাইও আছেন। চারটি পুরুষ একজন পিতা, একজন স্বামী, একজন ভাই আর একজন ছেলে। আর মামা-চাচা, খালু, নানা, দাদা কথা না হয় বাদই দিলাম। এবার আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে চারজন পুরুষ যদি একটি নারীকে চারপাশ থেকে ধরে, মানে আকরে থাকে অথাৎ পুর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ চারজন পুরুষ একটি নারীকে ঘিরে থাকলে সে বের হয় কি করে। আর কি করেই বা একটা নারী খারাপ চরিত্রহীন হতে পারে। তাহলে একবার চিন্তা করুন যেহেতু নারীরা আপনাদের কাছে আল্লাহ্র আমানত, যেহেতু আপনারা চারজন পুরুষ একটা নারীকে চারদিন থেকে ঘিরে রাখলে তার ঘারে কটা মাথা যে ও পালাবে। কি সাধ্যে আছে তার পালানোর।
এখন শুন আমার সম্মানিত পুরুষ ভাইয়েরা। তাহলে মেয়েদের রক্ষার দায়িত্ব কার। একমাত্র আল্লাহ্র পর হল পুরুষেরা। আপনারা মেয়েদের সঠিক দায়িত্ব পালন না করে আপনারা ভাবেন কি করে একটা মেয়েকে আমানত হিসেবে না রেখে কিভাবে নষ্ট করবেন।
বাবা মেয়ে বড় হলে খবর রাখেন না মেয়ে কোথায় যাচ্ছে কি করছে। তাই মেয়ে আরে ভাবে গিয়ে একজনকে ভালবেসে নিজে নিজে বিয়ে করে ফেলেছে মা-বাবা কিছুই জানেন না। তখন তারা এই স¤র্পকটা আর মেনে নেয় না। তখন ছেলের বাবার বাড়ির মানুষরাও মেনে নেয় না। তখন দেখা যায় কি বউকে জায়গা না দিলে ছেলে মা-বাবাকে খাবার দেবে না তাই হয়ত সংসারে এই অভাগী- মেয়ে টাকে ঠাঁই দেয় কিন্তু মন থেকে তারা মেনে নেয় না। তখন সংসারে আস্তে আস্তে সমস্যা বাড়তেই থাকে। ওদিকে বাবা তার মেয়ের কোন খবর নেয় না। আর এদিকে স্বামীর সংসারের মানুষদের অবহেলা অনাদর সইতে না পেরে মেয়েটি সংসার থেকে পালিয়েছে। এবার কি করবে? কি করে তার পেট চালাবে। দেখা যাচ্ছে পেটের দায়ে মেয়েটি কোন বড়লোকের ঘরে কাজ করতে গেল। তখন দেখা যাবে এই পুরুষটি এই মেয়েটিকে নষ্ট করতে চাইছে। অবশেষে সে নষ্টই হয়ে যায়।
অন্যদিকে কোন মেয়ে দেখা গেল অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে সেক্ষেত্রও একই পরিস্থিতি। আবার দেখা গেল কোনবিধবা মা অনেক কষ্টে শিষ্টে তার ছেলেকে লালন পালন করছে। কিন্তু পরে ছেলেটা বড় হয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে মাকে ছেড়ে চলে গেছে মায়ের কোন খোজই রাখছে না। তখন ঐ মা আর কি কি করবে বলুন? তখন দেখা যায় বাধ্য হয়েই তারা নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে কি দেখা গেল বাবা তার মেয়েকে বঞ্চিত করছে, আর স্বামী তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করছে; ভাই কোন বোনের দায়িত্ব নিচ্ছে না, ছেলে মায়ের খবর রাখছে না এবার কি হবে বলুন। তখনই মেয়েরা বাধ্য হয় খারাপ হতে। তাহলে বোঝা গেল নিকট পুরুষগুলো এরিয়ে গেল। আর পরপুরুষগুলো এগিয়ে এসে খুব সহজে তাকে মানে মেয়েটিকে নষ্ট করেছিল। এতে করে এই মেয়েটির কি অপরাধ বলুনত। আর মেয়েরা নষ্ট হওয়ার পিছনে কার হাত ভাইয়েরা।
তাই সকল পুরুষের প্রতি আমি অনুরোধ করে বলছি ভাই আপনারা আপনা দেয় মেয়ে, স্ত্রী, মা-বোন এদের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করুন। তাদের প্রতি অবহলা না দিয়ে এদের সম্মান দিন এদের ভালোবাসতে শিখুন অন্যকে শিখতে সাহায্য করুন। তাহলে দেখবেন আপনার সমাজের আর একটি মেয়েও নষ্ট হয়ে যাবে না তারা যেমন ফুলের মত পবিত্র হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে তারা ঠিক তেমনই থাকবে। কোন মেয়ে মানুষই মায়ের পেট থেকে খারাপ হয়ে জন্মায়নি। জন্মাতে পারেনি তারা ঠিকই পবিত্র ফুলের মত জন্ম নিয়েছে আর পবিত্রই থেকে যাবে।