বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য সত্তা। আর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আবির্ভাব একটি যুগান্তকারী ঘটনা। শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে নয়, নিজের চারিত্রিক গুণাবলি, যোগ্যতার বলে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শীর্ষপদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি বলে অভিহিত করা যথার্থই হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। সে সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। এরপর প্রায় ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবেই দেশে ফেরেন। টানা ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো এবং এরপর ২০০৯ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং চারবার প্রধানমন্ত্রী থাকার নজির আর কারও নেই। বাংলাদেশের তিনটি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’র মাঝি এখন তিনিই। সহজাত নেতৃত্ব গুণে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তাঁকে বিবেচনা করা হয় উন্নয়নের পথপ্রদর্শক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী, বিশ্বশান্তির দূত, বৈশ্বিক কূটনীতিতে দূরদর্শী নেতা, জাতির সার্বভৌমত্বের প্রতীক, নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রপথিক হিসেবে। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তি যদি প্রবল থাকে, তবে যেকোনো বাধাই অতিক্রম করা যায়- নিজের জীবন থেকে এই চরম সত্যটা জেনেছেন তিনি।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব যেমন অপরিহার্য ছিল, তেমনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষামুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন তথা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় তাঁরই রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বও আজ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পিতার মতো তিনিও রাজনীতিকে গ্রহণ করেছেন ত্যাগের আদর্শ হিসেবে। তাঁর সৎ, যোগ্য ও সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের রূপরেখায় আমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা খুঁজে পাই।
এ স্বপ্ন সত্যিই আমাদের ঘুমাতে দেয় না, আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। স্বদেশভূমির প্রতিটি ইঞ্চিতে আমরা আমাদের স্বপ্নের বীজ বুনছি অহর্নিশ। জাতির প্রত্যাশিত স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বপ্নের এ কর্ষিত জমিতে জনগণের ভালোবাসার আস্থার নাম- শেখ হাসিনা।
গণমানুষের জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনীকর্মের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর সুনিপুণ উপস্থাপনায় গবেষক, শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মোহন রচনা করেছেন ‘শেখ হাসিনা’। বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সত্যান্বেষী যেকোনো আগ্রহী পাঠকের জন্য এই জীবনীগ্রন্থটি সঠিক দিশা দেখাবে বলেই গভীরভাবে বিশ্বাস করি।
পাবনার যমুনাপাড়ের নগরবাড়ী ঘাটের যমুনা পুত্র আবদুল্লাহ আল মােহনের জন্ম ১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। প্রাতিষ্ঠানিক নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে ঢাকার ভাসানটেক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁর। নিত্যসহযােগী, স্বপ্নসহচরী স্ত্রী রাশনা রশীদও| ঢাকার একটি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার মহান পেশার সাথে জীবনাদর্শে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তার মােহন নেশাটিও শিল্পঘােরে নিরন্তর পরিভ্রমণ, জীবনানন্দে জীবনযাপন। সৃজনীজীবনের সুপ্ত স্বপ্নকে বিকশিত করতে প্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাঙ্গণে। আলােচিত সৃজনশীল সহশিক্ষার আনন্দময় আয়ােজন ‘মঙ্গল আসর পরিচালনা করে আসছেন। অনুকরণীয় শিক্ষকের নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযােগিতায় তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র ‘মােহনের মঙ্গল আসর। লেখাপড়া করেছেন ধােবাখােলা করােনেশন উচ্চ বিদ্যালয় (নাটিয়াবাড়ী, বেড়া, পাবনা), ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। বিপরীতমুখী পেশাজীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায়। সমৃদ্ধ তার জীবন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ। আবু সায়ীদের একান্ত সহকারী হিসেবে যেমন দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি আবার বিশ্ববরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের জাদুদলের একজন সদস্য হিসেবে। আলােক প্রক্ষেপণেও সহযােগিতা করেছেন মঞ্চে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাজ। করেছেন তকালীন বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ভােরের কাগজে।। এরপর ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার প্রশিক্ষণ বিভাগ। এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সােনালী ব্যাংকেও কাজ করেছেন। তার লেখালেখির আগ্রহের অন্যতম বিষয়-আলােকিত ব্যক্তিত্বদের অনুপ্রেরণামূলক জীবনী ও ভ্রমণকাহিনি। জনপ্রিয় সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত সরব কিন্তু। সেখানেও প্রবলভাবে অনুরাগী তিনি জীবনী, ছড়া-কবিতা, প্রবন্ধে-আলােচনায়, সর্বোপরি মননশীল চিন্তাচর্চায়। গভীরভাবে ভালােবাসেন বইয়ের পাশাপাশি মানুষ নামক জীবন্ত বিশ্বকোষ, মহাগ্রন্থ নিরন্তর পাঠ করতে।। প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ : বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘খােকা থেকে মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা', সম্পর্কের সেতুবন্ধনে : বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’, ‘হাসু থেকে শেখ হাসিনা : দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী’, ‘দৃষ্টি ও অন্তদৃষ্টির ভারত ভ্রমণ’ (দিল্লি, আজমির, জয়পুর ও আগ্রাভ্রমণ কাহিনি), ‘খুঁজে। ফেরা : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘মানবাধিকার চর্চা’, বঙ্গবন্ধুর লেখক সত্তা’ ।