একজন মেয়ের প্রতি বৃদ্ধ বাবার নসিহা। #হে আমার মেয়ে! তুমি তোমার বোনদেরকে বলঃ হে বোন! তুমি কি জান পুরুষেরা কেন তোমার কাছে আসতে চায়? কেন তোমাকে নিয়ে ভাবে? কারণ তুমি খুব সুন্দরী এবং যুবতী। সে তোমার সৌন্দর্য্যরে পাগল। তাই সে তোমার চারপাশে ঘুরে এবং তোমাকে নিয়েই ভাবে। এখন আমার প্রশ্ন হল, তোমার এই যৌবন ও সৌন্দর্য্য কি চিরকাল থাকবে? দুনিয়াতে কোন জিনিস কি চিরস্থায়ী হয়েছে? শিশুর শিশুকাল কি শেষ হয় না? সুন্দরীর সৌন্দর্য্য কি আজীবন থাকে? তোমার বোন যদি বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠনে আত্মনিয়োগ না করে এবং ইসলামের শত্র“দের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়ে ইসলামী পারিবারিক জীবনের গণ্ডির বাইরে চলে যেতে চায় তাহলে তাকে প্রশ্ন করঃ হে বোন! তুমি যখন বৃদ্ধ হবে, যখন তোমার পিঠ ও কোমর বাঁকা হবে এবং দেহের সৌন্দর্য্য বিলীন হবে তখন কে তোমার দায়িত্ব নিবে? তোমার পরিচর্যাই বা করবে কে? তা কি তোমার জানা আছে? যারা তার সেবা করবে, তারা হচ্ছে তার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি। আর সে রাণীর মত সিংহাসনে বসে পরিবারের অন্যদেরকে পরিচালনা করবে। এখন তুমি চিন্ত কর, তুমি কি করবে? বিবাহের মাধ্যমে তুমি কি এক নির্মল শান্তির সংসার রচনা করবে? না ব্যভিচারীনী হয়ে স্বল্প সময় উপভোগ করে তোমার ভবিষ্যৎ জীবনকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিবে? স্থায়ী সুখের বিনিময়ে অস্থায়ী সুখ ক্রয় করা কি কোন বুদ্ধিমানের কাজ হবে? যুবক বয়সের সামান্য বিলাসিতা কি শেষকালের করুণ পরিণতির সমান হবে? কখনই হবে না। ইউরোপ ভ্রমণকারী এক পর্যকট বলেনঃ আমি বেলজিয়ামের কোন এক শহরের রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় পথচারী পারাপারের জন্য সিগন্যাল খুলে দেয়া হলে দেখলাম একজন বৃদ্ধা রাস্তা পার হতে চাচ্ছে। সে এতই দুর্বল ছিল যে, তার হাত-পা কাঁপছিল। গাড়িগুলো প্রায় তার উপর দিয়ে উঠে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। কেউ তার হাত ধরছিল না। আমার সাথের একজন যুবককে মহিলাটির হাত ধরে সাহায্য করতে বললাম। তখন ৪০ বছর যাবৎ বেলজিয়ামে বসবাসকারী আমার এক বন্ধু বললেনঃ এই মহিলাটি এক সময় এই শহরের অন্যতম সুন্দরী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিল। পুরুষেরা তার উপর দৃষ্টি ফেলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত, তার সংষ্পর্শ পেতে পকেটের অর্থ খরচ করত এবং তার সাথে একবার হলেও করমর্দন করার প্রচেষ্টা করত। এই মহিলাটির যখন যৌবন ও সৌন্দর্য্য চলে গেল, তখন তার হাত ধরে একটু সাহায্য করার জন্য একজন লোকও সে পাচ্ছে না! এ রকম ঘটনা একটি নয়; শত শত পাওয়া যাবে। লেখক-শায়খ আলি তানতাবি রহ.
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।