সাহিত্যের অন্তনিহিত তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি কবিতা। যার মধ্যে অনেক গুলো শব্দের বাগ্ময় প্রতিধ্বণি নিহিত থাকে। যা ছন্দে ছন্দে ধ্বণিত হ’য়ে বন্ধন ঝংকার তোলে কবির কবিতায়। কবি অসিত কুমার মন্ডলের কবিতা সেই নিরীখে নি:সন্দেহে কবিতা বলা যায়। যদিও কবিতা গুলো গদ্য এবং পদ্য উভয় ছন্দের সংমিশ্রনে লিখেছেন। কবি নিজেই বলেছেন যে তিনি একজন মিশ্র ধারার কবি হ’তে চান। বর্তমানের নিরেট গদ্য কবিতার তিনি সমর্থক নন। তাঁর ভাষায়: কবিতা যদি সত্যিকার অর্থে গদ্যের রূপ হ’য়ে যায়; তাহলে গদ্যের আসল রূপ কি হবে? এ জন্যে ছন্দকে বজায় রেখে, গদ্য—পদ্যের মাঝামাঝি কবিতার একটি নতুন অবকাঠামো বা ধাঁচ তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কবিতা সাহিত্যকে নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন। এ চেতনায় কবি সাহিত্যের যে জাল বুনছেন কবিতায়; সেটি তাঁর অধিকাংশ কবিতায় স্পষ্ট প্রতীয়মান। প্রেমের কথা, প্রেমের রূপ—রস—গন্ধে আবেগাপ্লত হ’য়ে তা বিভিন্ন উপমায়, অনুপ্রাসে রঞ্জিত হ’য়ে অধিকাংশ কবিতাকে সত্যিকার মিশ্র কবিতায় রূপ দান ক’রেছে; এটি বলার অপেক্ষা নেই। সবাই বলে কবিরা প্রেমিক হন। সেই প্রেমানুভূতি কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে শব্দ হ’য়ে ভালবাসার দেহ বিনির্মাণ করে। এটি সত্যি কিনা আমার জানা নেই। প্রেমের অনুভূতি, ভালবাসার অবেগ প্রেমের কবিতা তৈরিতে একটি রসায়ন হিসেবে কাজ করে সত্য; আমরা সবাই তা জানি। কিন্ত কবির চেতনায় যদি আবেগ না থাকে এবং শব্দের ঝলকানি না থাকে, তাহলে তিনি কবি হ’য়ে উঠতে পারেন না। আবার কেউ কেউ বলেন বাস্তবিক কবিরা প্রেমিক। প্রেমের বিয়োগ—ব্যথা কবিতা তৈরিতে রসদ হিসেবে কাজ করে। কবি অসিত কুমার মন্ডলের ‘মনের জানালা খুলে’ কবিতা গ্রন্থটি সে দিক থেকে একটি উৎকৃষ্ট প্রেমের কবিতা গ্রন্থ হ’য়েছে বলা যায়। বাস্তব অনুভূতির আলোকে যেন গ্রন্থটির প্রতিটি কবিতা কবি অতি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন; তা প্রতিটি কবিতার শব্দ চয়নে, অন্তমিলে লক্ষ করা যায়। প্রেমের সত্যিকার কাব্যিক রস উক্ত গ্রন্থটিকে রসোত্তীর্ণ করেছে এটি বলা যায়। পাঠক মাত্রই উক্ত কাব্য গ্রন্থটি পাঠ করলে ভালবাসার এক অজানা জগতে হারিয়ে যাবেন ব’লে আমার বিশ্বাস। পরিশেষে বলতে চাই, উক্ত গ্রন্থটি প’ড়ে পাঠক সমাজ তথা তরুণ ও যুব সমাজ যদি আনন্দ পান; তাহলে আমাদের শ্রম সফল ও সার্থক হবে মনে করি।
অসিত কুমার মন্ডল প্রগতিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চেতনার ধারক। তিনি একাধারে একজন কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, সাহিত্য গবেষক, গীতিকার, সুরকার ও স্বরলিপিকার। এছাড়া তিনি একজন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। সাংবাদিক হিসাবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর। বর্তমানে সাংস্কৃতিক সাংবাদিকতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এক কথায় তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তবে মূলত তিনি একজন ‘প্রতিবাদী কবি এবং সংস্কারবাদী লেখক। তাঁর লেখায় সমাজের নানা অসংগতি, অন্যায়, ঘুষ, দুর্নীতি, শঠতা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ও অপরাধের বিরুদ্ধে সােচ্চার। তিনি একজন মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক, শান্তিপ্রিয় কবি ও লেখক। তিনি লেখালেখি শুরু করেন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়। বাড়িতে বাবা, কাকা, জ্যেঠাদের অষ্টকগানের, কীর্তনের এবং যাত্রাগানের দল থাকায় শৈশব থেকেই গানবাজনার প্রতি আকৃষ্ট হন। জ্যেঠামশায় ডাঃ অজিত কুমার মন্ডলের কাছে তার গান-বাজনার হাতেখড়ি। বাবা রামপদ মন্ডল ছিলেন যাত্রাদলের একজন বিবেক গায়ক। সম্ভবত সেই সূত্রে গানবাজনার প্রতি আকর্ষণ তার সহজাত।