চার পর্বে বিস্তৃত এই উপন্যাস আত্মজৈবনিক। মিলুকর্তার আড়ালে লুকিয়ে আছেন স্বয়ং লেখক। বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে জন্ম নেওয়া মিলুর শৈশব কৈশোরের দিনগুলো নিয়ে প্রথম পর্ব ‘কেমন আছ, সবুজপাতা'। দ্বিতীয় পর্বের পটভূমি পুরান ঢাকার ‘জিন্দাবাহার’। সেই জীবনের অনুপুঙ্খ বর্ণনার সঙ্গে মিলেমিশে আছে জিন্দাবাহারের গলিঘুঁজি আর নানাস্তরের মানুষ। তার পরের পর্ব 'মায়ানগর'। গেণ্ডারিয়া এলাকার মুরগিটোলা নামের এক নিম্নবিত্ত মহল্লা। মিলুর কিশোরকাল । একদিকে সংসারের টানাপোড়েন আর ভয়াবহ দারিদ্র্য, চাকরি হারানো বাবার অসহায়ত্ব, মায়ের দিশেহারা অবস্থা, ভাইবোনদের ক্ষুধাক্লিষ্ট মুখ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে মিলু। তার পরও যেন কোথায় জড়িয়ে যাচ্ছে বহতাজীবনের মায়াটুকু। শেষ পর্ব 'একাত্তর ও একজন মা' । হতদরিদ্র সংসারটিতে যখন ঢুকেছে সামান্য আলো, চাকরি ফিরে পেয়েছেন বাবা, তখনই তাঁর আকস্মিক মৃত্যু। সেই মৃত্যু আসলে এক হত্যাকাণ্ড । দশটি ছেলেমেয়ে নিয়ে শুরু হলো অসহায় মায়ের ভয়াবহ যুদ্ধ। একদিকে চলছে স্বাধীনতার যুদ্ধ, আরেকদিকে সন্তানদের নিয়ে এই মায়ের বেঁচে থাকার যুদ্ধ। সব মিলিয়ে জীবনযুদ্ধের এক মহাকাব্য 'এমন জনম'।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।