ভ্রমণ মানুষের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে, জীবন ও জগৎকে বুঝতে শেখায়। প্রকৃতির নানা রূপ-রঙ, সৃষ্টিনৈপূন্য দেখে মস্তিষ্কের বদ্ধ কোষগুলো ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হয়। বার্ষিক পরীক্ষার খড়গ মাথা থেকে নামার পরে মন-মস্তিষ্কের জটলা ছাড়াতে তেমনই এক আনন্দঘন, উত্তেজনাকর ভ্রমণে বেরিয়েছিল লেখক ও তার সাত বন্ধু। বান্দরবানের দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ আর কক্সবাজারের সাগরপাড়ে কাটানো স্মৃতি বিজড়িত ভ্রমণের আলেখ্য এই কয়েকটি পৃষ্ঠা। সুবিশাল পৃথিবীর বুকে বয়ে চলা নদী-সাগরে ঢেউয়ের নৃত্য, আকাশচুম্বী পর্বতমালার ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা, মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা, শিশিরভেজা পাতায় সোনালী রোদ, শুকনো ঘাসের ওপর প্রজাপতির ডানা ঝাপটানো, অন্ধকারে জোনাকির আনন্দমেলা, আলুলায়িত মেঘমালার বিচরণ, তারাদের মিটিমিটি জ্বলা—সবকিছু প্রত্যক্ষ করা যায় একেবারে গা ঘেঁষে। কান পেতে শোনা যায় অথৈ সমদ্রের তটে বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের আছড়ে পড়ার সুর মূর্ছনা, শো শো শব্দে বাতাসের ছুটে চলা, অথৈ জলরাশির ওপারে রক্তিম সূর্যের ডুব দেয়া। পরিচিত হওয়া যায় নানা অঞ্চলের বিচিত্র ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচার, স্থাপত্য-শিল্প, পুরাকীর্তি, সামাজিক প্রথা-পার্বণের সাথেও। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা এবং গুপ্ত রহস্যের স্বরুপ উন্মোচনের যে তীব্র ব্যাকুলতা ও উদগ্র বাসনা, তা অনেকাংশে পূর্ণ হয় ভ্রমণের দ্বারা। আশা করি এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণকাহিনীটি একজন ঘরকুনো পাঠককেও করে তুলবে ভ্রমণপিপাসু। বদ্ধ ঘরের কপাট খুলে, হৃদয়ের জানালা উন্মুক্ত করে মহাবিশ্বের যত বিস্ময় আছে, তার সবগুলোই ওলট-পালট করে দেখার প্রেরণা জোগাবে। সেই সাথে পাঠক এখানে পাবেন কিঞ্চিৎ সাদামাটা সাহিত্যের ছোঁয়া, পাবেন নিজের জ্ঞান-ভান্ডারকে প্রাচুর্যময় করতে অল্পবিস্তর তথ্য-উপাত্ত।