আমাদের ফাইট কাল্পনিক না বরং বাস্তব দুঃখ-দুর্দশার বিরুদ্ধেই, রাষ্ট্রপক্ষের উকিল যেটারে কইসেন “সো-কল্ড দুঃখ-দুর্দশা”। আমরা বেসিকালি দুইটা জিনিশের বিরুদ্ধে ফাইট করি, যে দুইটা জিনিশ সাউথ আফ্রিকায় আফ্রিকান’দের জীবনের প্রতীক হয়া গেসে, এবং এইগুলারে আইনের দ্বারা সুরক্ষা দেয়া হয়, আর সেইসব আইনকে আমরা চাই গুড়ায়া দিতে। এই দুইটা জিনিশের একটা হইলো গরিবি, আর অন্যটা হইলো মানুষ হিসাবে উপযুক্ত মর্যাদা না পাওয়া। আফ্রিকানরা সম্মানজনক মজুরী চায়। আফ্রিকানরা নিজের যোগ্যতা মোতাবেক কাম পাইতে চায়, গভরমেন্ট যে কামকে তাদের যোগ্য মনে করে তাদের উপর চাপায়া দেয় তারা সেইটা মাইনা নিতে চায় না। আফ্রিকানরা সেই জায়গায় বসত করতে চায় যেখানে সে কাম জুটায়, তারা চায় না তাদেরকে কোথাও থেইকা উচ্ছেদ করা হবে এ কারণে যে সে ওখানে জন্মায় নাই। আফ্রিকানরা যেখানে কাজ করে তারা সেখানে জমির মালিকও হইতে পারতে চায়, তারা অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকার জন্য বাধ্য হইতে চায় না। আফ্রিকানরা জেনারেল পপুলেশনের অন্তর্ভূক্ত হইতে চায়, তারা তাদের ঘেটো’র (ghetto) ভিতরে আবদ্ধ থাকতে চায় না। আফ্রিকান পুরুষ চায় সে যেখানে কাম করে সেই এলাকাতেই নিজের বউ-বাচ্চা লইয়া থাকতে পারতে, তারা মেন’স হোস্টেলের আন-নেচারাল জীবন চায় না। আফ্রিকান মহিলারা তাদের পুরুষের সাথে থাকতে চায়, তারা রিজার্ভ এর ভিতরের বিধবা জীবন চায় না। আফ্রিকানরা রাত এগারোটার পরেও বাইরে আসতে চায়, তারা চায় না তাদেরকে ছোট বাচ্চার মতো ঘরে আটকায়া রাখা হোক। আফ্রিকানরা তাদের নিজ দেশের ভিতরে ট্রাভেল করতে পারতে চায়, তারা তাদের মর্জিমতো যেকোনো জাগায় চাকরি খুঁজতে চায়, তারা চায় না এটা লেবার বুরো থেইকা ঠিক করে দেয়া হোক যে তারা কোথায় চাকরি নিতে পারবে এবং কোথায় পারবে না। আফ্রিকানরা গোটা সাউথ আফ্রিকার উপর তাদের ন্যায্য হিসসা বুইঝা পাইতে চায়; তারা সিকিউরিটি চায়, তারা সমাজে নিজেদের অংশটা পাইতে চায়। সবকিছুর উপরে আমরা চাই সমান পলিটিকাল রাইটস, কারণ সেটা না থাকলে আমাদের দূর্বলতা’গুলি হবে চিরস্থায়ী। আমি জানি শাদা’দের কাছে এটা একটা রেভলুশনারি কথা, যেহেতু সমান পলিটিকাল রাইটস মানে বেশিরভাগ ভোটার হবে আফ্রিকান। এটার কারণে শাদা’রা ডেমোক্রেসিকে ভয় পায়।
জন্ম: জুলাই ১৮, ১৯১৮ সালে । নেলসন ম্যান্ডেলা থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। থেম্বু রাজবংশ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের শাসক। তাঁর জন্ম হয় ট্রান্সকেই এর রাজধানী উমতাতার নিকটবর্তী ম্ভেজো গ্রামে। তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন নগুবেংচুকা (মৃত্যু ১৮৩২), যিনি ছিলেন থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর ইনকোসি এনখুলু অর্থাৎ রাজা।এই রাজার পুত্র ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার পিতামহ। নেলসনের বংশগত নাম ম্যান্ডেলাই এই পিতামহ থেকেই পাওয়া। তবে নেলসনের পিতামহী ইক্সহিবা গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁর শাখার কেউ থেম্বু রাজবংশে আরোহণ করার অধিকার রাখেন না । ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা ম্ভেজো গ্রামের মোড়ল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগভাজন হওয়ার পরে তারা ম্যান্ডেলার পিতাকে পদচ্যুত করে। তিনি তখন তার পরিবারসহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তবে তা সত্ত্বেও ম্পাকানইসা ইনকোসিদের প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন এবং থেম্বুর শাসনকর্তা হিসাবে জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবোকে নির্বাচিত করায় ভূমিকা রাখেন। ম্পাকানইসার মৃত্যুর পর দালিন্দ্যেবো ম্যান্ডেলাকে পোষ্যপূত্র হিসাবে গ্রহণ করেন। ম্যান্ডেলার পিতা ম্পাকানইসার ছিল চারজন স্ত্রী, ও সর্বমোট ১৩টি সন্তান (৪ পুত্র, ৯ কন্যা)। ম্যান্ডেলার মা ছিলেন ম্পাকানইসার ৩য় স্ত্রী নোসেকেনি ফ্যানি। ফ্যানি ছিলেন ম্পেম্ভু হোসা গোত্রের ন্কেদামার কন্যা। মাতামহের বাড়িতেই ম্যান্ডেলার শৈশব কাটে। তাঁর ডাক নাম "রোলিহ্লাহ্লা"র অর্থ হলো "গাছের ডাল ভাঙে যে", অর্থাৎ "দুষ্টু ছেলে"। ম্যান্ডেলা তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর শিক্ষিকা ম্দিঙ্গানে তাঁর ইংরেজি নাম রাখেন "নেলসন"। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন। এর অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। এর পর তিনি তাঁর দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তাঁর গোত্রের দেয়া মাদিবা নামে পরিচিত। গত চার দশকে ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভারত সরকার প্রদত্ত ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ভারতরত্ন পুরস্কার ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার। তাছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেক পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন। তিনি ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ , ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।