১৯৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে ৫ হাজার লোকের একটা জমায়েতে, মন্টগোমেরি’র হল্ট স্ট্রিট বাপিস্ট চার্চের সামনে মার্টিন লুথার কিং এই ভাষণ দিছিলেন। মনটগোমরি’র সিটি বাস সার্ভিসে নিজের সিট ছাইড়া দিতে রাজি না হওয়ায় মিসেস রোজা পার্কস’রে পুলিশ এরেস্ট করার ৪ দিন পরে। এই এরেস্টের ফলে আম্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলে পয়লাবারের মতো সিভিল রাইটস ক্যাম্পেইন শুরু হয়। এই ভাষণে কিং অডিয়েন্সরে বাস বয়কট করার লাইগা বলেন, এবং একটা টার্গেট সেট কইরা দেন যে, মন্টগোমেরি বা অন্য কোন জায়গা’তে কালা মানুশদের বাসে বসা নিয়া জাস্টিস না পাওয়া পর্যন্ত এই বয়কট চলতে থাকবে। ১ বছরের বেশি সময় ধইরা তাদের এই প্রটেস্ট চলছিল, ব্ল্যাক পিপল'রা বাসে উঠেন নাই এই সময়, মন্টগোমরি'তে আর আম্রিকার অন্য অনেক জায়গায়।... তো, যে কোন মুভমেন্টেই এই 'ওয়ান পয়েন্ট' ঠিক করা; তার পক্ষে যুক্তি দেয়া, ব্যাকগ্রাউন্ডটারে ক্লিয়ার কইরা পিপল'রে এনগেইজ করা এবং দাবি আদায়ে একসাথে ফাইট করতে থাকা - এই তিনটা জিনিসই জরুরি। আর মার্টিন লুথার কিং এই কাজটাই করছেন।
আর যেইভাবে করছেন সেইটাও খেয়াল করার মতো ঘটনা। দেখবেন, মার্টিন লুথার কিং’য়ের কথা খুবই লিরিক্যাল। পারফর্মেটিভ কবিতার মতন। মানে, খালি শুনলেই না, বরং পড়তে গিয়াও টের পাওয়ার কথা অনেকের। ইমোশন যখন ইনটেন্স হয় তখন একটা সুর চইলা আসে; খুব কাছের কেউ মারা গেলে কেউ যখন বিলাপ কইরা কান্দে দেখবেন সুর কইরা বিলাপ করতেছে; এইটা কেউ তারে বইলা দেয় না যে, সুর কইরা কান্তে হবে; আবেগ'টা, ইমোশন'টা তারে অই জায়গাতে নিয়া যায়। যারা ভালো বক্তা, ভালো ওয়াজ করেন, ভাষণ দিতে পারেন খেয়াল কইরা দেখবেন শব্দের রিদমগুলারে উনারা ধরতে পারেন, ইউজ করতে পারেন। পাবলিক স্পিকিংয়ে এই জিনিসটা জরুরি।...
আরেকটা খেয়াল করার মতো ব্যাপার হইতেছে, মার্টিন লুথার কিং'রে মনে হইতে পারে ক্রিশ্চান পাদ্রী, খ্রিস্টধর্ম নিয়া ভাষণ দিতেছেন! বাংলাদেশে হইলে তো তারে 'ইসলামী মৌলবাদী'-ই বলতেন সেক্যুলার ও বামাতি'রা। কিন্তু দেখেন এইখানে ক্রিশ্চিয়ানিটি খালি ধর্ম না, ব্ল্যাক-পিপলদের, আম্রিকার মজলুমদের একমাত্র আশ্রয়েরও জায়গা। ধর্মের এই শিকড়টারে মার্টিন লুথার কিং উপড়ায়া ফেলার জন্য বলেন নাই বা এড়ায়া যাইতে বলেন নাই, বরং এই যে শক্ত, ডিপ-রুটেড একটা বিশ্বাসের জায়গা আছে তারে আরো পোক্ত করার জন্য বলছেন।… 'রাষ্ট্র খুনী' :) - এই টাইপের ফাইজলামিও করেন নাই; বরং বলছেন, আম্রিকাতে ডেমোক্রেসি আছে বইলা আমরা আজকে মিছিল-মিটিং করতে পারতেছি, কমিউনিস্টদের মতো টোটালিটেরিয়ান রিজিমে থাকলে তো পারতাম না!
তো দেখেন, মানুশের দাঁড়ানোর জায়গাগুলা কই, বিপদে পড়লে কার কাছে সে বিচার দিবে? - সমাজের কাছে, ধর্মের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে; মার্টিন লুথার কিং-ও এইটাই করতেছেন। সমাজের পক্ষে দাঁড়াইছেন, ধর্মবিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়াইছেন, রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়াইছেন; এইখানে যা যা ভুল আছে, গাফিলতি আছে, তারে কারেক্ট করার আর্জি জানাইছেন।