একটু পরে দূরে গিয়ে দাঁড়ায় তটিনী । হুড়মুড়িয়ে কাঁদতে থাকে মেহু । রাতের আঁধার । ঠিক মধ্যরাত । জমাট বাঁধা দুঃখগুলোর রক্তক্ষরণ হচ্ছে মস্তিষ্কে । কেউ নেই! আকাশ ফরসা হয়ে গেছে । জোৎস্নার আলোয় গাছের আড়ালে বোঝা যাচ্ছে মেহুর চোখের জল । মায়া হয় তা দেখে অরণ্যর । হেরে যাওয়া এ ভালবাসার শেষ দিন কিনা আজ বুঝে উঠে না তা অরণ্য । হুদয়ের রক্তক্ষরণ চলতেই থাকে ওর । বন্ধ হয় না । বেঁচে এসে যেন আফসোসটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায় । অনুভূতিহীন, ভালবাসা শূন্য এসব মানুষ বাঁচে? ও ভাবে ।
ম্লান মন খারাপ নিয়ে অরণ্য জড়িয়ে নেয় মেহুকে । একটু কাঁদে । মেহুর ওড়নায় লেগে যায় অরণ্যর চোখের জল। অবশ্য শুকিয়ে যাবে একটু পরেই । মুছে যাবে । স্মৃতিগুলোও কি মুছে যাবে, নিঃশেষ হবে? জানা নাই অরণ্যর । স্মৃতি নিঃশেষ হয় না, থেকে যায় বাতাস হয়ে, আঁধার হয়ে । মাঝে মাঝে ভয় দেখায় খুব নির্জন বিদঘুটে রাতে । নিঃসঙ্গতায়, একাকিত্বে ।
নিজের কান্নাগুলো নিজে ছাড়া কেউ যেন দেখার নেই । টের পায় তা অরণ্য । মেহুকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে ও, যেন দুজনের দুই গ্রহের বিষাদ এক পৃথিবীতে এসে মিলে গেছে । ও দেখতে পায় মেহুর কাঁধের সামনে বিভৎস মৃতপ্রায় এক নিজের ছায়া । অরণ্য কাঁদছে, কেউ দেখছে না । নিজের কান্না দেখছে কেবল ওর ছায়া । বিষণ্ণ এই ছায়াগুলোর দিকে তাকালেই, ওর ভিতরে বৃষ্টি নামে, টুপ টুপ করে বিষাদ ঝরে ।