আদিকাল থেকেই মানুষ খালি চোখে দেখে আসছে তারা-ভরা আকাশ। ধীরে ধীরে মানুষ জানল তারা-ভরা আকাশের চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, উল্কা ও ধূমকেতুর কথা। এসব জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণের জন্য সেই দুরবিন বা টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পূর্ববর্তী যুগেই মানমন্দির বা অবজারভেটরি স্থাপিত হয়েছিল। এর মধ্যে প্রাচীন যুগের ‘হিপার্কাস মানমন্দির’, মধ্যযুগের ‘মারাঘা মানমন্দির’ ও রেনেসাঁ যুগের ‘টাইকো মানমন্দির’ অন্যতম। আর পাথরযুগের ‘স্টোনহেঞ্জ’-এর কথা আমরা অনেকেই জানি, যেখানে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের কাজ হতো বলে ধারণা করা হয়।
এভাবে খালি চোখে দেখতে দেখতে মানুষ একদিন আবিষ্কার করল দুরবিন। শুরু হলো দুরবিনের চোখে আকাশ দেখার পালা। আমাদের সামনে উন্মোচিত হতে লাগল সৌরজগৎ, তারকাজগৎ এমনকি বিশ্বজগৎ। এতদিন জানতাম কোটি কোটি তারার কথা। এখন দেখছি কোটি কোটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিও রয়েছে আমাদের এ মহাবিশ্বে। এসব চোখ-ধাঁধাঁনো জ্যোতিষ্ক দেখে আমরা শুধুই ভাবছি আর ভাবছি! ভাবতে ভাবতে বিজ্ঞানীরা একদিন সন্ধান পেলেন মহাকাশের দুর্বোধ্য জ্যোতিষ্কের, যেখান থেকে রেডিও বা বেতার তরঙ্গ আসছে। এসব তরঙ্গ ধরার জন্য আবিষ্কার হলো বেতার দুরবিন। স্থাপিত হলো ‘বেতার মানমন্দির’। শুরু হলো বেতার দুরবিন দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ। এরপরও বিজ্ঞানীরা বসে নেই। তারা দেখলেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মহাকাশের অনেক তরঙ্গকে আটকে রাখে। ফলে পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে মহাকাশের সব খবরা-খবর পাওয়া অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন পৃথিবীর বাইরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ চালানো। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই স্পেস টেলিস্কোপ বা মহাশূন্য দুরবিন স্থাপিত হলো। এ দুরবিন দিয়ে আগের চেয়ে আরও নিখুঁতভাবে আকাশ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কারের মুখ দেখছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে আজ অবধি জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চা বা গবেষণার জন্য কোনো মানমন্দির স্থাপিত হয়নি। তাই প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মানমন্দির, মানমন্দিরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, জ্যোতির্বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কারের কথা ও ছবি নিয়ে সাজানো হয়েছে এ বই। এ বইয়ের অধিকাংশ লেখাই ‘বিজ্ঞান চিন্তা’র বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত। আশা করি, বইটি সকল পাঠকদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করবে।