দা গড অফ দা স্মল থিংস এ একটা পার্টে আমি কথাকলির কথা বলি, যেইটা কেরালার একটা ড্যান্স ফর্ম - কাহিনি বলার একটা সেরা, ব্যালাডিক (লোকগাথা) ফর্ম, যেইটা আমারে গল্পকার হইতে সবচেয়ে বেশি ইনফ্লুয়েন্স করছে মনে হয়। ওইখানে আমি বলি কেমনে একজন কথাকলি ড্যান্সার আপনারে হ্যাপিনেসের মধ্যে লুকানো দুঃখ দেখাইতে পারে, গর্বের সাগরের মধ্যে লুকায়ে থাকা শরমের মাছরে দেখাইতে পারে। আরো, দা এন্ড অফ ইমাজিনেশন এ এক ধরণের লেখকদের ম্যানিফেস্টো আছে - "স্যাডেস্ট জায়গাগুলাতে আনন্দ খুঁজো। বিউটি খুঁজতে খুঁজতে ওর বাসায় চইলা যাও।" আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ইন্ডিয়ার নারীদের জন্য হ্যাপিনেস হইলো একটা অস্ত্র। কারণ আমাদের হ্যাপি থাকাটা এক্সপেক্টেড না। এক্সপেক্ট করা হয় আমরা স্যাক্রিফাইস করব, সাফার করব, সার্ভ করব। যখন কেরালায় বড় হইতেছিলাম আমার মা পুরুষসহ নানা ব্যাপার নিয়া খুব প্যারা খাইতেছিলেন। কিন্তু উনার স্কুল এত হ্যাপি একটা প্লেস। স্কুলের নারী, মেয়েদের কখনো মনে করানো হয় না যে ওরা ছেলেদের থেকে কোন অংশে কম। ওরা যেমনে চলে, ওদের ব্যবহার, ওদের ইজি কনফিডেন্সে আপনি এইটা টের পাবেন। কথাকলি- কথা হইলো কাহিনি আর কলি হইলো নাটক। কথাকলি ড্যান্সারের শরীর কাহিনি বলে, আর শুধু বলেই না, কাহিনি হয়া যায়। মহা-শক্তিশালী রাজা থেকে কাহিনি এক মিনিটেই একটা ছোট, ইন্টিমেট ডিটেইলে বদলায়া যাইতে পারে। এইটা আকাশ হইতে পারে, রথ হইতে পারে, যুদ্ধ, প্রেমিক, হরিণ, জঙ্গলের বান্দর, ভয়ংকর রাজা, চক্রান্ত করা রানী হইতে পারে। আমি এইটা পছন্দ করি। শরীর দিয়া লেখা। আমার চামড়া, আমার চোখ, আমার চুল। আমার সবসময় মনে হয় কোনরকম হেভি ব্রিদিং ছাড়া এইরকম বড় ঝাঁপ দিতে পারার ক্ষমতাটাই হইলো স্টোরিটেলারের ফিটনেস। কোন এফোর্ট দেখানো লাগে না। শুধু বিশাল ব্যাপার থেকে ছোট ব্যাপারেই মুভ করার ক্ষমতাটা না, হিউমার থেকে দুঃখের ব্যাপার থেকে হার্টব্রেক থেকে অশ্লীলতাতে মুভ করা - সবকিছুই আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট। কখনো আপনি খুবই সুন্দর, হার্টটাচিং একটা লেখা দেখবেন, কিন্তু ওইটাতে কোন হিউমার নাই, কোন অশ্লীলতা নাই - আর এইটা আমার কাছে, আমি যা করি ওইটার একটা অংশ। এইটারে সবকিছু হইতে হবে - হিন্দুস্তানি ক্লাসিকাল মিউজিকের ভাষায়, এইটার এমন একটা রাগ হইতে হবে যেখানে সরগমের সব নোট থাকবে। শার্প আর ফ্ল্যাটসহ।
বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক, রাজনৈতিক লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও মাঠপর্যায়ের অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়ের আলাপচারিতার সংকলন দানবের রূপরেখা। আলাপচারিতার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-২০০১-২০০৮। এর মধ্যে নির্ণীত হয়েছে বিশ্বব্যবস্থার নতুন রূপ, রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিমানুষ প্রত্যেকেই প্রভাবিত হয়েছে নতুন ব্যবস্থায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা, আফগানিস্তান দখল, ইরাক যুদ্ধের সূচনার পাশাপাশি করপোরেট বিশ্বায়নের বিস্তার ঘটেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলে খ্যাত ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান, কৃষি, খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের অধিকার হারানো, অহিংস আন্দোলনের কার্যকারিতা হারিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের বিস্তারও এ সময়ের ঘটনা। এই প্রসঙ্গগুলো নিয়েই কথা বলেছেন অরুন্ধতী রায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্ণবাদ ও ভারতে হিন্দু ফ্যাসিজমের পুনরুত্থান, পৃথিবীর অপরাপর দেশজুড়ে দুঃশাসন ও কর্র্তৃত্বপরায়ণতা, পরিবেশ বিপর্যয়, সাধারণ মানুষের অধিকার হ্রাস, নারীর ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি-বর্তমান বিশ্বের এই প্রবণতাগুলোও উঠে এসেছে এই আলাপচারিতায়। তাঁর সাহস, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতা আপনাকে ক্ষুব্ধ, উদ্বুদ্ধ আর আগ্রহী করে তুলবে।