পাবলিশার’স নোট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের একশ বছর হইছে বইলা সরকারিভাবে এক প্রোগ্রাম হইতেছে কোন গ্রামে; তো, গ্রামের এক বুড়া লোক কইতেছেন, ভাই, এই লোক আবার কেমন কবি? আমাদের এলাকায় তো জীবনে কোনদিন গান করতে আসেন নাই, উনি এতো বড় কবি কেমনে হইলেন?... যিনি লিখছেন বইটা উনি কইতেছেন, গ্রামের লোকের কাছে কবি মানে হইতেছে কবিয়াল, আর বড় বড় কবিয়ালরা তো নানান এলাকায় গিয়া গান গাইয়া বেড়ান... তো, এই কারণে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'রে বড়কবি মনে করতে পারার কোন কারণ নাই! দুসরা জিনিস হইলো, জালালউদ্দিন খাঁ বাঁইচা থাকতে উনার ৪টা বই ছাপাইছিলেন; এর মধ্যে পয়লা ২টা বই আব্বাসউদ্দিন'রে উনি পাঠাইছিলেন। উনার গান পইড়া আব্বাসউদ্দিন খুবই পছন্দ করছিলেন, উনারে চিঠিও লিখছিলেন। চিঠি'তে এইরকম লিখছিলেন যে, জালালউদ্দিন আর কতো দিন "লোকচক্ষুর অন্তরালে" পইড়া থাকবেন, উনারে "রেডিওর দুনিয়াতে" নিয়া আসবেন উনি। চিন্তা করেন ব্যাপারটা। হাওর-এলাকার এতো বড় আর্টিস্ট জালালউদ্দিন, কিন্তু পইড়া আছেন "লোকচক্ষুর অন্তরালে"; কারণ উনি তো রেডিও'তে নাই। তো, দেখেন তাইলে, আমরা তো ভাবি যে, দুনিয়ার তাবত বাঙালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'রে চিনেন, কিন্তু আসলে খুব মিনিমাম 'শিক্ষিত' বাঙালিই উনারে চিনেন, এর বাইরে উনার আসলেই বেইল নাই কোন; বড়জোর দেখতে লালন ফকিরের মতন আছিলেন - এইরকম ভাবা যাইতে পারে। বা আব্বাসউদ্দিন মনে করতেন রেডিওতে যাইতে পারা'টাই হইতেছে 'আসল'; এখন ধরেন সিনেমা বা অনলাইনে হিট হইতে পারাটা যেইরকম।... মানে, আমি যেইটা বলতে চাইতেছি, আপনার নিজের দেখা দুনিয়াটাই পুরা দুনিয়া না আর কি! এই যে ক্লাস কনশাসনেস, এই যে মিডিয়া রিচ, এইগুলাও পার্ট অফ দ্য গেইম! জালাল উদ্দীন খাঁ এই মিডল-ক্লাস আর্ট-কালচারের গেইমটার মধ্যে নাই তেমন। সময়ের হিসাব করলে জালাল উদ্দীন খাঁ (১৮৯৪ - ১৯৭২), কাজী নজরুল ইসলাম এবং জীবনানন্দ দাশ কাছাকাছি সময়েরই লোক। কিন্তু যেহেতু “আধুনিক কবিতা”রে আমরা সেন্টার কইরা রাখছি, খালি পেরিফেরিতেই নাই উনি, মোটামুটি “বিস্মৃত” ক্যাটাগরিতে চইলা গেছেন। কিন্তু এই বইয়ের অনেকগুলা লেখা পড়লেই চিনতে পারার কথা বাংলাদেশি রিডারদের এবং বুঝতে পারার কথা যে, উনার জিনিসগুলা এখনো বাঁইচা আছে, জাস্ট উনার নামটা মুইছা ফেলা হইছে বা কোনভাবে “বাদ” পইড়া গেছে। জালাল উদ্দীন খাঁ’র ৭০০’র বেশি গীতি-কবিতা ছাপানো অবস্থায় আছে। এই বইয়ে ৪০টা লেখা পড়তে পারবেন।