এবারের বিয়েটাও যখন গায়ের রঙের কারণে ভেঙে গেল, তখন মা একটু রাগারাগিই করল। এত খরচ করে খাওয়া-দাওয়া করানো হলো, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। এরপর থেকে মার্কেটে যেন রুপুকে দেখান হয়। সৎ মা এমনই বলবে। রুপু মনকে সান্ত্বনা দেয়। সে ঠিক করে আর পাত্রপক্ষের সামনে যাবে না। এত আয়োজন, এত পরিশ্রম সবই জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে বারবার। মা রাগ তো করবেই। রুপু সিদ্ধান্ত নেয় তার বিয়ে, সে নিজেই ঠিক করবে। খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রী চাই কলামে বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ল রুপুর। “বিপত্নীক এক সন্তানের পিতা, বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকুরিরত, পাত্রের পাত্রী চাই। বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা অগ্রগণ্য।" রুপু এখন জীবনটা অন্যরকম করে ভাবছে। তার জীবন ছিল অবহেলিত। সৎ মায়ের অনাদরে, অবহেলায় সে বেড়ে উঠেছে। সে কি পারে না তার মতো একটা অবুঝ শিশুর জীবন বাঁচাতে? সে ছাড়া ঐ বিপত্নীক ভদ্রলোকের সন্তানের আর কে কদর বুঝবে? তাছাড়া তারও মুক্তি দরকার। এভাবে অনাদর, অবহেলায় তার জীবন চলতে পারে না। হোক বিপত্নীক, তবুও সম্মান দিলে সে তাকেই বিয়ে করবে। দুঃখগুলো যদি গহীন কোনো জঙ্গলে রেখে আসা যেত, তবে বেশ হত। প্রায় ভাবে রুপু। আবার এটাও ভাবে, দুঃখগুলো বেড়ালের মতন ঠিকই গন্ধ শুকে শুকে বাড়িতে ফেরত আসে। কত কিছুই যে এলোমেলো ভাবে রুপু। আজ যদি তার নিজের মা থাকত, তাহলে হয়ত তাকে টিউশনি করতে হত না। হয়ত বাবাও তার বদলে যেতেন না। বাবাকে সে দোষ দেয় না। পরিস্থিতি মানুষকে বদলিয়ে দেয়, রুপু বিশ্বাস করে।