তালতলী সুইসগেটের পাশে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। বুনোঘাসে পূর্ণ জায়গাটা। সকালে যখন লঞ্চ সাইরেন বাজাতে বাজাতে মিঠাপুরের মোড় ঘোরে, ওখানে দাঁড়ালে মাথাটা দেখা যায়। সকাল সাতটা কি সাড়ে সাতটা নাগাদ এসে ভেড়ে ফেরিঘাটের পাশের পন্টুনে। জটলা পড়ে যায় ঘাটসংলগ্ন জায়গাটায়। সুইসগেট থেকে তা চোখে পড়ে। আজও জটলা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই। কিন্তু লঞ্চের দেখা নেই। আজ এদিকে টিপ দিয়েছে ভয়েজার। লঞ্চটা নতুনই বেশ। আর আগেরগুলাের চেয়ে বড়োসড়ো। সাতটা ছাড়িয়ে আটটা, আটটা ছাড়িয়ে নয়টা মানুষ বাড়ছে ঘাটে। লঞ্চ ত এলো না। কী ঘটলো তাহলে? একসময় বহুল প্রচলিত একটা শব্দবন্ধ ছিল দক্ষিণবঙ্গে- দোতালা লঞ্চ। বাতাসে লঞ্চের ইঞ্জিনের চেনা শব্দ শুনে হাঁক ছাড়ত ছেলেবুড়ো নির্বিশেষে দেহাতী লোকজন- এএএ দোতালা লঞ্চ আইয়া পড়ছে এএএ! আজকাল সেসব রুটে চারতলাবিশিষ্ট লঞ্চও চলে। সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হওয়ায় লঞ্চশিল্প এবং লঞ্চকেন্দ্রিক জীবনধারায় দৃশ্যমান ভাটা পড়েছে। তা সত্ত্বেও বৃহত্তর বরিশালের মানুষের জীবনের সঙ্গে এ সকল বহুতল লঞ্চ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সে কারণেই হয়তো চলতি কথার ফ্রেমে আটকে গেছে কিছু কথা। 'মোর লঞ্চও গ্যালে, মোর পঞ্চও গ্যালে' যেমন। বর্তমান ঔপন্যাসিকের প্রয়াস এই আপাতক্ষীয়মান জীবনধারার একটা দলিল মলাটবদ্ধ রাখার। 'গ্রাস' পাঠকের চিন্তাধারায় করাঘাত করবে এর বিস্তৃতির শক্তিতে। বিস্তৃতি সময়ের চরিত্রের কাহিনির।
রেজওয়ান আহমেদের জন্ম পটুয়াখালী জেলা সদরে ১৯৯১ সালের ৭ এপ্রিল। বেড়ে ওঠা পটুয়াখালী শহরেই। প্রচুর গান শোনার অভিজ্ঞতা থেকে গীতিকবিতা এবং ছড়া লিখতে শুরু করেন স্কুলজীবনেই। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে লেখার গতিপথে পরিবর্তন আসে। এসময় কিছুকাল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করেন। লেখালেখির তুমুল নেশা তাকে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে অন্য নদীর মুখ বেছে নিতে বাধ্য করে। ছেড়ে দেন এলএল.বি. ডিগ্রি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। গল্প লিখতে শুরু করেন ২১ বছর বয়সে। তারপর কিছুদিন লেখালেখিতে অনিয়মিত ছিলেন। পরবর্তীতে পুরোদমে গল্প লেখায় মন দেন। এ সময় তার লেখা ‘স্টাফ কেবিন’, ‘আওয়াজ’, ‘লেখক সাহেবের বিচার’, ‘ঘরছাড়া’, ‘বুড়ো-বুড়ি’, কক্ষসহচর’, ‘গোলাপগন্ধী চিরকুট’— গল্পগুলো পরিচিতদের মাঝে বেশ আলোচিত হয়। তার লেখা ভিন্ন আঙ্গিকের বুক-রিভিউ প্রশংসিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তার লেখা কিছু বুক-রিভিউ ‘বইচারিতা’ ম্যাগাজিনের পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। তার চলমান গবেষণার একটি হচ্ছে ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গদ্যে নারীর অন্তর্চারিত্রিক এবং আন্তর্চারিত্রিক বৈচিত্র্য’ এবং অন্যটি ‘লোকঐতিহ্যে ফ্রয়েডীয় চেতনার ধারা : শিল্পচৈতন্যের সূত্রসন্ধান’। নন্দিত কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের স্নেহধন্য এ লেখকের প্রথম উপন্যাস ‘গ্রাস’। উল্লেখ্য তাঁর প্রেরণায়ই উপন্যাস লেখার সাহস করেছেন লেখক।