বাংলাদেশে মার্কেজরে বাংলা ভাষায় পড়া হইছে নাকি? মার্কেজ এখনও বাংলাভাষায় তো আবির্ভাব করতে পারেন নাই ওইভাবে। মার্কেজের জন্যে এখনও ইংরেজির গ্রেগরি রাবাসা সাহেবই ভরসা। তবুও পশ্চিমবঙ্গে অমিতাভ রায় নামে একজন আছেন, সাহিত্যিক কিংবা অনুবাদক। তিনি মার্কেজের সব গল্পগুলার ‘মার্কেজ টোন’-এ অনুবাদ তো করছেনই, পাশাপাশি নতুন একটা কিছু তৈরি করারও চেষ্টা চালাইছেন। আপনি মার্কেজের ইন্টারভিউয়ে এই জিনিসটা খেয়াল করবেন, অনুবাদের বিষয়ে তিনি এই বিষয়ে কনভিন্সড- অনুবাদ হইতেছে আপনার নিজের ভাষায় ‘রি-ক্রিয়েট’ করা, নতুন কিছু তৈরি করা যেইখানে আপনি বাংলাদেশে বাংলাভাষায় মার্কেজরে আপন ভাবতে শুরু করবেন। এইজন্যে, স্প্যানিশ ভাষার উপর ডিগ্রি কিংবা ‘তথাকথিত’ প্রথিতযশা অনুবাদক হওয়া সত্ত্বেও মার্কেজের সেই ‘টোন’ ধরতে না পারার কারণে কিংবা তার দাদিমার ‘ন্যাচারাল এক্সপ্রেশন’ না ধরতে পারার কারণে মার্কেজ এখনও বাংলাভাষায় ওইভাবে পা রাখতে পারে নাই বলেই আমার মনে হয়। এখন কেউ যে এই কৌশল আয়ত্ত কইরা তার কিছু কাজ যে অনুবাদ করবে, মার্কেজ অনুবাদ সাহিত্যের সেই ব্যবসাপ্রক্রিয়ার দুর্দশা নিয়াও ডিটেইলে কথা বইলা গেছেন। মার্কেজের সাহিত্য বলেন কিংবা আলোচনা দুইটাই বাংলাদেশের জন্যে প্রাসঙ্গিক। দুশ বছর না হলেও কলাম্বিয়া প্রায় সাড়ে চারশ বছর স্প্যানিশদের দ্বারা কলোনাইজড ছিলো। কলোনাইজড হওয়ার যে অভিজ্ঞতা কিংবা রেজাল্ট তার কমবেশি হইলেও অনেকখানি মিল থাকে অন্য কলোনাইজড দেশগুলার সাথে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বাধীনতা লাভের পরও যে একটা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়, সেই দেশে তা মার্কেজ ছোটবেলা থেকেই দেইখা আসছেন। তার মনে হইছে, এই জিনিসগুলারে ইগনোর করা হয়তো ঠিক হবে না এবং তিনি তার উপন্যাসে করেনও নাই। যে রাজনৈতিক আবহাওয়ার ভিতর দিয়া বড় হইছেন তিনি- ড্রাগস, খুন, রাহাজানি, ভোটচুরি সবকিছুকেই তিনি মহাকাব্যিক টোনে টাচ কইরা গেছেন, যে স্পর্শটা আরও মজবুত হইছিলো তার ওয়ান হান্ড্রের্ড ইয়ার্স অফ সলিট্যুড-এ। বাংলাদেশেও ‘সম্ভবত’ পরিস্থিতি খুব একটা আলাদা কিছু না। তবে আমাদের এই দেশে জিনিসগুলা যেমন সাহিত্য করা কিংবা লেখালেখি ধীরে ধীরে এতই কঠিন হয়া উঠতেছে, আমাদের সাহিত্যরে বাইরে রিপ্রেজেন্ট করাটাও সম্ভবত আরও কঠিন হইয়া ঊঠবে। এই কথা বলার যথেষ্ট কারণ আছে। আপনি যখন মার্কেজের লেখাগুলা পড়বেন আপনার মনে হবে কিংবা অন্য কারো লেখা পড়লেও মনে হবে, আরে! এই মার্কেজের মতোই আরও বহুত লেখক আছেন বাংলাদেশে যারা অন্তত ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়া হইলেও বিশ্বমানের কাজ করছেন। মনে হইতে পারে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা শহীদুল জহির কিংবা আরও অনেকজন যাদের ভালো মানের ইংরেজিতে অনুবাদ করা গেলে হয়তো সারভেন্তেসের পরে মার্কেজরে সবাই যেমনে লুফে নিছে, তেমনি রবীন্দ্রনাথের পরে বাংলাভাষার আরও কয়েকজনরে বিশ্বসাহিত্যের লুফে নিতে অসুবিধা হইতো না। উপন্যাসের ক্ষেত্রে আমাদের শক্তিমত্তাটা হয়তো আরও একটু ব্যাপক আকারে জানান দেয়া যাইতো। এই জিনিসটা ঘটলে বাংলাদেশিদের ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য করার উদীয়মান যে টেন্ডেন্সি তাও হয়তো কমতো। কারণ, মার্কেজরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তারা স্প্যানিশেই লেখালেখি করার জোর পাইছেন, যেটাতে তাদের স্প্যানিশ ভাষারই বিস্তৃতি বাড়ছে, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটতে পারতো। আর দিনশেষে, এক ভাষার সাথে আরেক ভাষার শব্দ-সাহিত্য অনুবাদ হইলে ভাষা আসলে মারা যায় না, বরং ভাষাগুলাই শক্তিশালী হয়। কালচারাল আদানপ্রদানের এই একটা সুন্দর বৈশিষ্ট্য। লেখালেখির ক্ষেত্রে আরেকটা জিনিস, এই ফিল্ডটাকে আরও শক্তিশালী কইরা দিছে বলে আমার লাগে, তা বিশেষত ইন্টারনেট-মিডিয়ার জোরে। এখন গড়ে গড়ে লেখক। যতবেশি কন্টেন্ট, ততবেশি লেখক। আলাদা পার্টিকুলার কোন লেখকের যে অস্তিত্ব তা ধীরে ধীরে হারায়া যাইতেছে, রোলা বার্থের ’৬৭-র যে কথা “লেখক মইরা গেছে”, তা এই দেশে দুই হাজার বিশে আইসা যেন আরও প্রকট হয়া উঠতেছে। অন্তত আপনি যদি একটা ফেসবুক পেজও খুলেন নামমাত্রে, আপনার একটা লেখা দরকার। সবাই লিখতে ব্যস্ত, নট নেসেসারিলি তা সাহিত্য হইতে হবে, একটা কন্টেন্ট থেকে শুরু করে, একটা স্ট্যাটাস, বাংলা, ইংরেজি যাই হোক না কেন, এক্সপ্রেশন বা নিজেরে প্রকাশ করা এত সহজ হয়া উঠছে, নিজের ‘ইমেজ’ কিংবা সবাই যখন নিজেরে ‘লেখক’ ভাবতে আরম্ভ করে তখন সেই ‘লেখক’ পরিচয়টাই ক্যানো জানি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়া উঠে, তখন লেখক আসলে কী লেখছে বা তার লেখা কী তার আর অত গুরুত্ব থাকে না। লেখার থেকে ‘লেখক’ ইমেজটাই মুখ্য হয়া উঠে। আর লাখ লাখ ইমেজের ভিড়ে যেমন কোন ইমেজরেই আলাদা কইরা চিনা যায় না, তেমনি কোন লেখকরেও আলাদা কইরা চিনা যায় না। এইরকমই ক্রাইসিসে এখনও আমরা পুরাপুরি পড়ি নাই বরং বলা চলে ধীরে ধীরে আগাইতেছি। একটা টাইমে লেখার আসলে তেমন কোন গুরুত্ব থাকবে না। টেক্সটের সংজ্ঞা খুব দ্রুতই পাল্টাতে শুরু করছে। সবকিছুই ধীরে ধীরে ‘লেখা’ হইয়া উঠতেছে। তবে আপনি যদি লেখারে একটা “কনজ্যুমার প্রোডাক্ট” হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন তবে সেইটার টিকে থাকার সম্ভাবনা বহুগুণে বাইড়া যাবে। লেখার নিজের টিকে থাকার তাগিদেই লেখার সাথে রয়ালিটি যুক্ত হবে, আর্থিক মূল্য যুক্ত হবে, এবং যা শুরু হইতেছেও এবং যেইটার প্রভাব আমাদের উপর পড়ছে, পড়তেছে, পড়বে এবং যেইটা মার্কেজ তার আশপাশের তরুণদের মধ্যে দেখছেন, যেইটা নিয়া তিনি খেদও প্রকাশ করছেন, যেই কারণে তার শেষের দিকের লেখাগুলা লিখতে খুব কঠিনই লাগতো।
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ১৯২৭ সালে কলোম্বিয়ার আরাকাতাকায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি বোগোতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি কলোম্বিয়ার এল এস্পেক্তাদর সংবাদপত্রের রোম, প্যারিস, বার্সেলোনা, কারাকাস ও নিউ ইয়র্কের বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের রচয়িতা, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল: আইজ অব আ ব্লু ডগ (১৯৪৭), লিফ স্টর্ম (১৯৫৫), নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল (১৯৫৮), ইন ইভিল আওয়ার (১৯৬২), বিগ মামা’স ফিউনারেল (১৯৬২), ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচুড (১৯৬৭), ইনোসেন্ট এরেন্দিরা এ্যান্ড আদার স্টোরিজ (১৯৭২), দ্য অটাম অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক (১৯৭৫), ক্রনিকল অব আ ডেথ ফরটোল্ড (১৯৮১), লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা (১৯৮৫), দ্য জেনারেল ইন হিজ ল্যাবেরিন্থ (১৯৮৯), স্ট্রেঞ্জ পিলগ্রিমস (১৯৯২), অব লাভ এ্যান্ড আদার ডেমনস (১৯৯৪) এবং মেমোরিজ অব মাই মেলানকলি হোরস (২০০৫)। দীর্ঘ রোগভোগের পর গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ১৭ এপ্রিল ২০১৪ সালে প্রয়াত হন। Gabriel José de la Concordia García Márquez (6 March 1927 – 17 April 2014) was a Colombian novelist, short-story writer, screenwriter and journalist, known affectionately as Gaboor Gabito throughout Latin America. Considered one of the most significant authors of the 20th century and one of the best in the Spanish language, he was awarded the 1972 Neustadt International Prize for Literature and the 1982 Nobel Prize in Literature. He pursued a self-directed education that resulted in his leaving law school for a career in journalism. From early on, he showed no inhibitions in his criticism of Colombian and foreign politics. In 1958, he married Mercedes Barcha; they had two sons, Rodrigo and Gonzalo. García Márquez started as a journalist, and wrote many acclaimed non-fiction works and short stories, but is best known for his novels, such as One Hundred Years of Solitude (1967), The Autumn of the Patriarch (1975), and Love in the Time of Cholera (1985). His works have achieved significant critical acclaim and widespread commercial success, most notably for popularizing a literary style labeled as magic realism, which uses magical elements and events in otherwise ordinary and realistic situations. Some of his works are set in a fictional village called Macondo (the town mainly inspired by his birthplace Aracataca), and most of them explore the theme of solitude. On his death in April 2014, Juan Manuel Santos, the President of Colombia, described him as "the greatest Colombian who ever lived."